
মিরর স্পোর্টস : রেফারি মিজানুর রহমান ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গেই বাংলাদেশের ফুটবলে বিশেষ এক ইতিহাস রচিত হলো। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের বিরুদ্ধে ০-৪ গোলে হারের মধ্য দিয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন নিশ্চিত হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে যাত্রা শুরু ব্রাদার্স ইউনিয়নের। ৪৬ বছর পর দেশের শীর্ষ স্তর থেকে পরের স্তরে অবনমিত হলো ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
গোপীবাগের ফুটবল পাগল ব্যক্তিদের হাতে গড়া ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়ন। গফুর বেলুচ ছিলেন এলাকার ফুটবলারদের গড়ার কারিগর। সেই ব্রাদার্স খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৃতীয় বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে উঠে। দ্বিতীয় বিভাগে প্রতিপক্ষদের অসংখ্য গোল বন্যায় ভাসিয়ে ১৯৭৫ সালে জায়গা করে নেয় প্রথম বিভাগে।
এরপর থেকে দেশের ফুটবলে আবাহনী ও মোহামেডানের পর নিজেদের তৃতীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে কমলা রঙের জার্সির দলটি। আশি ও নব্বইয়ের দশকের পুরোটাতেই দাপট দেখায় তারা। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর কয়েক বছর ছিল ব্রাদার্সের স্বর্ণ যুগ।
২০০৭ সালে পেশাদার লিগ শুরুর পর ব্রাদার্স ইউনিয়নের অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে। নেতৃত্ব, আর্থিক ও সাংগঠনিক সংকট মিলে ক্লাবটি ধুঁকছিল কয়েক বছর ধরে। গত দুই তিন মৌসুমে কোনোভাবে বেঁচে গেলেও এই যাত্রায় আর বাঁচতে পারল না।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন বাংলাদেশের ফুটবলে উজ্জ্বল এক নাম। প্রিমিয়ার ফুটবলের শীর্ষ স্তর থেকে এই ক্লাবের বিদায় দেশের ফুটবলের জন্য অশনিসংকেতই। এদিনের ম্যাচটি ছিল ব্রাদার্সের অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াই। সেই অস্তিত্ব লড়াইয়ের ম্যাচে ব্রাদার্স উল্টো বড় ব্যবধানে হেরেছে।
কাঁদা মাঠে ব্রাদার্স প্রথমার্ধে ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুই গোল হজম করে। ব্রাদার্স ইউনিয়ন এমন দলের সঙ্গে হারল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিপক্ষে। যাদের এবার দল গঠনেরই কথা ছিল না। জাপানি ফুটবলার কাতোর আর্তনাদে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। ওই মুক্তিযোদ্ধা ২১ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে টিকে থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচছে আর ব্রাদার্স সমান ম্যাচে মাত্র ছয় পয়েন্ট নিয়ে অবনমিত হলো। লিগের বাকি তিন ম্যাচ জিতলেও ব্রাদার্সের মুক্তিযোদ্ধাকে স্পর্শ করা সম্ভব হবে না।
লিগের বাইলজ অনুযায়ী এবার প্রিমিয়ার লিগ থেকে দুটি দল অবনমিত হবে। ব্রাদার্স ও আরামবাগ দুই দলের অবনমন নিশ্চিত হয়েছে। এই দুই দল ফুটবল ফেডারেশনকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে করোনা পরিস্থিতিতে এই বছর রেলিগেশন না দিতে। ফুটবল ফেডারেশন অতীতে নানা কারণে রেলিগেশন মওকুফ করেছে বিভিন্ন স্তরে। ঐতিহ্যবাহী ব্রাদার্স বাফুফের করুণা পায় কি না সেটাই দেখার বিষয়।
ঘরোয়া ফুটবলে এক সময়ে দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, ওয়ারী, ভিক্টোরিয়ার মতো ক্লাবের। সেই ক্লাবগুলো এখন নিজেদের অস্তিত্বের সন্ধানে। ব্রাদার্সের অবস্থান হবে এখন প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে। দ্বিতীয় স্তর থেকে ব্রাদার্স আগামী মৌসুমেই প্রিমিয়ারে ফিরবে নাকি ধীরে ধীরে ওয়ান্ডারার্স, ওয়ারী, ভিক্টোরিয়ার পথে যাবে সেটাই দেখার অপেক্ষায়।