ঢাকা : রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের একটি বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলো ফুলবাশি রানী (৩৪) এবং মেয়ে সুমি রানী (১১)। গতকাল শনিবার কামরাঙ্গীর চরের নয়াগাঁও এলাকার ৩ নম্বর গলির তুলাগাছতলায় একটি বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবেশীদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ লাশ উদ্ধারের সময় ফুলবাশি রানীর স্বামী গৃহকর্তা মুকুন্দ চন্দ্র দাস (৩৬) ও আরেক কন্যা ঝুমা রানীকে (১৪) জীবিত উদ্ধার করে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ সময় মুকুন্দ চন্দ্রকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা গেছে। তাঁকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
kalerkantho ঝুমা পুলিশকে জানিয়েছে, ভোরে ঘুম ভাঙলে সে তার বাবাকে দেখেছে ছোট বোনের গলায় পলিথিন পেঁচিয়ে রাখতে। আর সকালে ঘুম ভাঙলে মা ও বোনের লাশ খাটে এবং বাবাকে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে ঝুমা। দুজনের গলায়ই আঘাতের চিহ্ন দেখেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে দড়িসহ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ক্রাইম সিন ইউনিট।
ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা মুকুন্দর সংসারে করোনাকালের অনটনে কলহ চলছিল। আলামত দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, মুকুন্দ তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর নিজে ছারপোকা মারার ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। চিকিৎসার পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। পাশাপাশি হত্যার পেছনে মুকুন্দ ছাড়া অন্য কেউ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘দুজনের লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে মুকুন্দ ও তার বড় মেয়ে ঝুমাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত রাতে মা ও দুই মেয়ে খাটে ঘুমানো ছিল, আর মুকুন্দ মেঝেতে ঘুমিয়ে ছিল। ভোরের দিকে বড় মেয়ে একটা কিছু দেখেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই বিষয়টি বলা যাচ্ছে না।’
কামরাঙ্গীর চর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহত দুজনের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনার পর স্বামী মুকুন্দ ছারপোকার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তাঁকে বর্তমানে মিটফোর্ড হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কামরাঙ্গীর চর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা আনোয়ার বলেন, নয়াগাঁও তুলাগাছতলা এলাকার এক কক্ষের একটি বাসায় দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকতেন মুকুন্দ। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। রিকশা ভ্যানে সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেন মুকুন্দ। কখনো ঠেলাগাড়িও চালাতেন। মাঝেমধ্যে মাছও বিক্রি করতেন। সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকায় কিছুটা কলহ ছিল। কিন্তু ঠিক কী কারণে স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যা করা হতে পারে সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট তথ্য জানা যায়নি। মুকুন্দকে আটকের পর তাঁর অস্বাভাবিক আচরণ দেখে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা আনোয়ার বলেন, এখনো মুকুন্দকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তিনি কিছুটা সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে বেঁচে যাওয়া বড় মেয়ে ঝুমা জানিয়েছে, ভোরে ছোট বোনের ধস্তাধস্তিতে তার ঘুম ভেঙে যায়। তখন সে দেখতে পায়, মুকুন্দ পলিথিন দিয়ে সুমির শ্বাসরোধ করছেন। বাবা মুকুন্দকে সে জিজ্ঞাসা করে, সুমির গলায় পলিথিন পেঁচিয়েছে কেন? মুকুন্দ জানান, সুমি বমি করছে। তাই পলিথিন পেঁচিয়ে রেখেছেন তিনি। এরপর ঝুমা ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম ভাঙলে বিছানার ওপরে মা ও বোনের নিথর দেহ এবং মেঝেতে মুকুন্দকে বসে থাকতে দেখে ঝুমা। এরপর সে কান্নাকাটি করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বজনরা অভিযোগ করলে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।