
মিরর ডেস্ক : ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো রাত জাগরণ করা। আর ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয় এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো নফল নামাজ পড়া। এ নামাজকে ‘কিয়ামুল-লাইল’, ‘সালাতুল-লাইল’ও বলা হয়ে থাকে। কোরআন-হাদিসের অসংখ্য জায়গায় ‘তাহাজ্জুদ’ নামাজের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে লক্ষ্য করে কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করো—তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ১৬)
হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)
তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময়
তবে তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে ওঠার পর। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদের জন্য বিছানা ত্যাগকারীর প্রশংসা করে আয়াত নাজিল করেছেন—‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ১৬)
সহজে যেভাবে তাহাজ্জুদের সওয়াব পাব
তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে ওঠার পর হলেও এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায় এবং তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভ হয়। কেননা তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় এশার নামাজের পর থেকেই শুরু হয়ে যায়, যদিও উত্তম সময় হলো ঘুম থেকে ওঠার পর। আমরা অনেকেই শেষ রাতে উঠতে না পারার কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতের এই দুর্বলতার প্রতি সদয় হয়ে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে তোমরা এশার নামাজের পর শোয়ার আগেই তাহাজ্জুদের নিয়তে দু-চার রাকাত নামাজ পড়ে নেবে।
হাদিস শরিফে এসেছে, সাউবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রাত্রিজাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতর পড়বে তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে।’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১১০৬; তাহাবি, হাদিস : ২০১১)
এশার পর চার রাকাত নফলে শবে কদরের মতো সওয়াব
অন্য হাদিসে এসেছে, কাব (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করে এশার জামাতে অংশগ্রহণ করবে, অতঃপর এশার নামাজের পর চার রাকাত (নফল) নামাজ পড়বে, যাতে কেরাত রুকু সেজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, তার জন্য শবে কদরের মতো সওয়াব লেখা হবে। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ৪৯৫৫)
তা ছাড়া ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদিস যেখানে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার উদ্দেশ্যে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে রাতে মেহমান হয়েছিলেন, ওই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শোয়ার আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়ার আমলও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৭)
অতএব, আমাদের যারা শেষ রাতে উঠতে পারছি না, তাদের জন্য উচিত হলো পুরোপুরি বঞ্চিত না হয়ে এশার নামাজের পরপরই তাহাজ্জুদের নিয়তে দু-চার রাকাত নামাজ পড়ে নেওয়া। এতে আশা করি, আল্লাহ তাআলা আমাদেরও তাহাজ্জুদগোজারদের অন্তর্ভুক্ত করবেন, ইনশাআল্লাহ!