
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে ঘাতকরা এক সময় নিজেদের বিচারের উর্ধে ভেবেছিল। অনেক দম্ভোক্তিও করেছিল। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর হলেও বাংলার মাটিতেই তাদের বিচার হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউই আইনের উর্ধে নয়। বিচার হলেও এখন পর্যন্ত কয়েক খুনী বিদেশে পলাতক। ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের পিছনের নায়করা। এখনও ঘৃণ্য খুনী ও তাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের স্বার্থে এই খুনীদের ফিরিয়ে আনা এবং নেপথ্য কারিগরদের খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি। তদন্ত করে সকল নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের স্বরূপ উন্মোচন করতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য তা খুব জরুরী। আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই কমিশন গঠনের কাজে হাত দেবে সরকার।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ঘাতকচক্রকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে খন্দকার মোশতাক। তাদের বিচার বন্ধ করার জন্য জারি করে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ। জিয়াউর রহমান খুনীদের প্রায় সবাইকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত করেন। দায়মুক্তির অধ্যাদেশকে সংবিধানে যুক্ত করে পবিত্রতা নষ্ট করেন রাষ্ট্রের গর্বিত সংবিধানের। দেশবাসীকে বঞ্চিত করেন পিতৃহত্যার বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে। এইচ এম এরশাদ এবং খালেদা জিয়াও একই পথ অনুসরণ করে খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া অব্যাহত রাখেন।
জনকের হত্যার বিচার পেতে দীর্ঘ ৩৪টি বছর অপেক্ষা করতে হয় বাঙালী জাতিকে। খুনীদের পুনর্বাসনে কার কি ভূমিকা এবং উপকারভোগী কারা, তা দেশবাসীর সামনে এখন দিবালোকের মতোই সুস্পষ্ট। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে অনেক নেপথ্যচারীর ভুমিকা। হত্যাকান্ডের সময় বাংলাদেশে অনুসন্ধানী কাজে থাকা বিখ্যাত অনেক সাংবাদিকের লেখনীতেও ঘৃণ্য খুনের পেথ্যের নায়কদের কর্মকান্ডের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। এসব সূত্র ধরে এগুলেই তদন্ত কমিশন পেতে পারে অনেক তথ্য।
এখনও বিদেশে পলাতক পাঁচ খুনীর কে কোন্ দেশে রয়েছে তা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক দুই খুনীকে দেশে ফেরাতে দুই রাষ্ট্র প্রধানের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাকি খুনীদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার জোর ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এবার শোক দিবসে পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা এবং নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ উন্মোচনে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জোর দাবি উঠেছে। সরকারও এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারলেই জাতির পূর্ণ কলঙ্কমুক্তি লাভের পাশাপাশি বন্ধ হবে অব্যাহত ষড়যন্ত্র। আগামী প্রজন্ম চিনতে পারবে ইতিহাসের মীর জাফরদের।