
মিরর বিনোদন : নানান অনিয়মে গানের মানুষদের স্বপ্ন ফিকে হয়েছে আরো আগেই। মিউজিক প্রডিউসার যারা ছিলেন পৃষ্ঠপোষকতায়, তারা অলমোস্ট আর গানে নেই। গানের বিপননে বহুমাত্রিকতার সঙ্কট মূল সমস্যা। লগ্নিকারী প্রডিউসার মূলধন ফেরত না পেলে কেন বিনিয়োগ করবেন ! পুরনো অডিও ব্যবসার ইনকাম আর নাই। ফেসবুক আর বিশটা পত্রিকার নিউজ প্রচার করেই নতুন পুরাতন শিল্পীরা নিজেদের দিকে দৃষ্টি ফেরানো বা আকর্ষণের চেষ্টায় আছেন।
কোনো গাইড লাইন নাই গানের মানুষদের সোশ্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করার মতো। কপিরাইট অফিস নামের একটা জগদ্দল পাথরের লোড নেয়া এমনিতেই মুশকিল, মামলা মোকদ্দমা তো মাত্র শুরু হলো। নতুন গান সৃষ্টির চেয়ে পুরনো গানের হালুয়া রুটির ভাগ নিয়ে মনযোগী সবাই। খোকলা ফোকলা হয়ে যাওয়া সিস্টেমে প্রফেশনালদের কাজ শূন্যের কোঠায়। সঙ্গীত চলছে অ্যামেচারদের টাকায়, ষ্টেজ শো এখন মোটামুটি ইতিহাসের পর্যায়ে পৌঁছেছে। অডিও প্রযোজকরা ব্যস্ত নাটক নির্মানে। বাণিজ্যে ধরা খাওয়ার আগ পর্যন্ত তাৎক্ষণিক প্রফিট অনেক আনন্দের হয়।
সঙ্গীতকে লাভ লোকসানের পাল্লা বাটখারায় মাপা সম্ভব নয়। দেশান্তরী হচ্ছেন দেশের সেরা গায়ক গায়িকারা। পেশা বদলে গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছেন প্রাণ্তিক মিউজিশিয়ানরা। যাত্রাশিল্প শেষ হয়েছে আরো আগে। অথচ সুষ্পষ্ট নীতিমালা এবং সঠিক ব্যাবস্থাপনা থাকলে তাদেরকেও কাজে লাগানো যেতো সমাজের উন্নয়নে। জরুরি ম্যাসেজ পৌঁছানো যেতো সোনালী দিনের মতো আনন্দ বিনোদনের মাধমে। হাজারো পরিবার এখন অসহায়। সঙ্গীত এখন ভাইরাল নাটকীয়তার শিকার। গুরুমূখী বিদ্যাটা হয়ে গেছে পশ্চাদমূখী, আফসোস বাংলাদেশ।
কোনো সরকারের একার কিছু করার নেই। যাদের সমস্যা তারাই শতধাবিভক্ত। সঠিক মনে নেই, কোনো একজন ওস্তাদ বলে গিয়েছেন- একটা দেশকে পিছিয়ে দিতে শিক্ষা সংস্কৃতি ধ্বংসের বিকল্প নেই, এই চক্রান্তই চলছে। যাদের কাছে গান থেকে অর্জিত মুনাফা জমা, তারা আজ মুষ্টিযোদ্ধা, হাতের মুঠ আর খোলেনা। ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের ইনভেস্টমেন্ট আর আসে না। কারণে অকারণে এখন দেশের মোটামুটি সিনিয়র গায়ক হয়েছি। নিবেদিতপ্রাণ সঙ্গীতকর্মীদের হারিয়ে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।
আরেক দিকে জন্মদিনের বেলুনে পানি ভরে সঙ্গীত নিয়ে লারে লাপ্পা খেলা চলছে। এই মাটির নুন খেয়েছি, ঋণ শোধ করতে হবে, আপাতত টিকে থাকার সংগ্রাম চলছে। সঙ্গীতের ব্রোকারদের রাজত্ব খতম হবে একদিন। আবারো কোলাহলমুখর সংস্কৃতির জগৎ ফিরে আসবে, শুধু সময়ের অপেক্ষা। শত শতাব্দী পার হয়ে গেলেও হীনমন্যদের আক্রমণে বাংলা ভাষার সংস্কৃতি কখনোই বিনষ্ট হবে না। স্বাধীন স্বার্বভৌম সবুজ সমতল বাংলাদেশের বাংলা সংস্কৃতি ভুলে ভুলে বেড়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত খতম হয়ে যাবেনা। ভালবাসা অবিরাম।
-কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে