
ঢাকা : ২০০২ সালে সাতক্ষীরায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নাম-পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। তার নাম আরিফুর রহমান ওরফে রঞ্জু। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলার একজন পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের কথা জানালেও তার নাম-পরিচয় তখন জানায়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি।
শনিবার (২১ আগস্ট) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, রঞ্জুর বাবা লুৎফর রহমান ও দাদা মাহবুবুর রহমান মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রঞ্জু ১৯৯৩ সালে কলারোয়া সরকারি কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মামলার এজাহার ও তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে সড়কপথে ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি। পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা হয়। হামলাকারীরা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে ও বোমা বিস্ফোরণ করে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এ সময় বহরে থাকা ১৫–২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তৎকালীন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম ও তার নেতাকর্মীরা এ হামলার পেছনে ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭০-৭৫ জনকে আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে মামলাটি রেকর্ড করেনি পুলিশ। এ ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা আদালতে একটি মামলা করা হয়। আদালত কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করার আদেশ দেন।
মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে বিএনপির তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলামসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিন ভাগে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে সাক্ষী করা হয় ৩০ জনকে। তবে নয়জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি স্থগিত করা হয়। হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সাতক্ষীরার নিম্ন আদালতে গত তিন বছর বন্ধ হয়ে ছিল মামলাটির বিচারকাজ।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত গত বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নথি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন।
এরপর বিচার শেষে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন। ৫০ আসামির মধ্যে ১৫ জন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।