
মিরর ডেস্ক : খতিবে বাগদাদি (রহ.) ‘আল-ফকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, কোনো এক বিজ্ঞজনকে বলা হলো, অমুক ব্যক্তি অনেক কিতাব সংগ্রহ করেছে। তিনি তাকে বলেন, তার অনুধাবন ক্ষমতা কি তার সংগৃহীত কিতাবের সমান? লোকটি জবাব দিল, না। তখন তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে সে কিছুই করেনি। চুতষ্পদ জন্তু ইলম দিয়ে কী করবে!
খতিবে বাগদাদি (রহ.) ইয়াহইয়া ইবনে মুইন (রহ.)-এর উক্তি বর্ণনা করেছেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, কেউ যদি এক লাখ হাদিস মুখস্থ করে, তবে কি সে ফতোয়া দিতে পারবে? তিনি জবাব দিলেন, না। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, দুই লাখ হাদিস মুখস্থ করলে কি ফতোয়া দিতে পারবে? তিনি বলেন, না। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, যদি তিন লাখ হাদিস মুখস্থ করে? তিনি জবাব দিলেন, না। চার লাখ? তিনি বলেন, না। যদি পাঁচ লাখ হাদিস মুখস্থ করে? তিনি জবাব দিলেন, আশা করা যায়।
খতিবে বাগদাদি (রহ.) এ উক্তি বর্ণনা করে বলেছেন, পাঁচ লাখ হাদিস শুধু মুখস্থ করা উদ্দেশ্য নয়; বরং প্রত্যেক হাদিসের মর্ম উপলব্ধি করা এবং সে সম্পর্কে ব্যুৎপত্তি অর্জন করা আবশ্যক। তিনি লিখেছেন, ‘কারো পক্ষে নিজেকে ফতোয়ার আসনে সমাসীন করার জন্য ইয়াহইয়া ইবনে মুইন (রহ.) যে পরিমাণ হাদিসের কথা বলেছেন, সেগুলো সম্পর্কে ব্যুৎপত্তি অর্জন এবং তীক্ষ জ্ঞান অর্জন ছাড়া তা সংগ্রহ করা যথেষ্ট নয়। কেননা ইলম হলো, প্রকৃত বুঝ ও ব্যুৎপত্তি অর্জনের নাম। বেশিসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করার নাম ইলম নয়।’ (আল-জামে, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭৪)
সুতরাং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির দোহাই দিয়ে শুধু হাদিস সংগ্রহ করা ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। আর কেউ যদি অনেক হাদিস সংগ্রহ করেও, তবু কি সে সরাসরি কোরআন ও হাদিসের ওপর আমর করতে সক্ষম হবে? মোটেও নয়। ইজতেহাদের অন্য যেসব শর্ত আছে সেগুলো অর্জন করা আবশ্যক নয় কি? রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ইলম তথা দ্বিনি জ্ঞান তাঁর বান্দাদের থেকে উঠিয়ে নেবেন না; বরং তিনি আলেমদের ওঠানোর মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেবেন। এমনকি একসময় কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষ তখন অজ্ঞ-মূর্খ লোকদের কাছে প্রশ্ন করবে, তারা ইলমহীন ফতোয়া দেবে। ফলে তারাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮৭৭, ১০০; মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৩)
এ হাদিসে রাসুল (সা.) সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে ইলমের অস্তিত্ব নির্ভর করে উলামাদের অস্তিত্বের ওপর। আলেম ও ইলম পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং ইলমকে টেকনোলজির অনুগামী মনে করা যুক্তিসংগত নয়।
আল্লামা শাওকানি (রহ.) লিখেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়-নিষ্ঠার ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে জ্ঞানের প্রত্যেক শাখায় অভিজ্ঞ লোকদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করবে।’
আল্লামা শাওকানি (রহ.) আরো বলেছেন, ‘আলেম যদি অযোগ্য লোকের কাছ থেকে ইলম শিক্ষা করে এবং জ্ঞানের সংশ্লিষ্ট শাখায় পারদর্শী নয়—এমন লোকের বক্তব্যকে সে প্রাধান্য দেয়, তাহলে সে অনুমাননির্ভর এবং অবিমৃশ্যকারী।’ (আদাবুত তলাব ও মুনতাহাল আরাব, পৃষ্ঠা ৭৬)
আল্লামা সাখাভি (রহ.) লিখিত ‘আল-জাওয়াহিরু ওয়াদ দুরারু’ নামক কিতাবে আছে, ‘যে ব্যক্তি একাকী ইলমের পথে প্রবেশ করল, সে একাকী সেখান থেকে বের হয়ে গেল।’ (আল জাওয়াহির ওয়াদ দুরার, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৮)
সুতরাং শিক্ষকবিহীন দ্বিনি জ্ঞান হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই জ্ঞান অর্জনের আগে এর উৎস ও গতিপথ সম্পর্কে জানা থাকা জরুরি।