
মিরর ডেস্ক : করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। যানবাহন চলাচল বন্ধ। বিনা কারণে লোকজন বাইরে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। এরইমধ্যে অনেক মাদকসেবী বাসা থেকে বের না হওয়ায় তাদের কাছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ডেলিভারি দিতো মগবাজারের টিকটক হৃদয় বাবু গ্রুপের সদস্য হিরো অনিকসহ তার সহযোগীরা। এ ছাড়াও তারা গোটা হাতিরঝিল এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। এ চক্রের অস্ত্র ও মাদকসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
তারা হলো: অনিক হাসান ওরফে হিরো অনিক (২৫), হিরা (২২), আবির আহমেদ রাকিব (২২), শহিদুল ইসলাম ওরফে এ্যাম্পুল (৩৪), ও সোহাগ হোসেন আরিফ (৩৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগাজিন, ৫টি ধারালো অস্ত্র, ১টি চেইন, ৩শ’ পিস ইয়াবা, ৭টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৩ হাজার ৪শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, হিরো অনিক মগবাজার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। পাশাপাশি সে ইয়াবার কারবার করতো। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সে ইয়াবা হোম ডেলিভারি করে আসছিলো।
তিনি আরও জানান, অনিক ও তার সহযোগীরা হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা মানুষ ও পথচারীদের আটকে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতো। হিরো অনিকসহ আটক সহযোগীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই হত্যা ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, ভারতের কেরালায় নারী পাচারের ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া টিকটক হৃদয় ওরফে বাবুর সঙ্গেও হিরো অনিকের সখ্যতা ছিল। হৃদয়কে বিভিন্ন সময় অনিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহযোগিতা করতো। এ ছাড়াও অনিক ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করতো হৃদয়কে।
তিনি আরও জানান, অনিক রাজধানীর মগবাজার, হাতিরঝিল ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার নামে হত্যা মামলা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ ৯টি মামলা রয়েছে। তার একটি গ্রুপ রয়েছে, যেখানে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছেন। কিশোর বয়সে অনিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়। ২০১৬ সালে সে আলোচিত আরিফ হত্যা মামলার আসামি হিসেবে পরিচিতি পায়। হিরো অনিক মগবাজার, মধুবাগ, মীরবাগ, নতুন রাস্তা, পেয়ারাবাগ, চেয়ারম্যান গলি, আমবাগান, ও হাতিরঝিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে মাদকের কারবার চালাতো।
তিনি আরও জানান, হিরো অনিকের সহযোগীদের কারও কোনো পেশা নেই। তারা হিরো অনিকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতো। শহিদুল ওরফে এ্যাম্পুল নামে মাদক ও চুরির ছয়টি মামলা, আবিরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা, সোহাগের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু অপহরণ, মাদক ও ডাকাতির তিনটি মামলা, এবং হিরার বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত ও চুরির একটি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। হিরো অনিক সিন্ডিকেটের বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। এরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এদের এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িতের তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যেটি জানা গেছে যে, অনিক মগবাজার এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের বড় হোতা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানা গেছে। ওই মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি ও সহকারী পরিচালক এএসপি মো. ইমরান হোসেন ইমন প্রমুখ।