
অর্থনীতি রিপোর্ট : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমদানি করা পণ্য, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশে প্রযোজ্য সব ধরনের শুল্ক, ভ্যাট ও আগাম কর শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সই করা আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) এনবিআরের জনসংযোগ দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ১৭ আগস্ট জারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনে দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার জনস্বার্থে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্প ও ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমদানিকরা পণ্য, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ বা পুন:রফতানির শর্তে সাময়িকভাবে আমদানিকরা যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য পণ্যের ওপর আরোপিত সব আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, রেগুলেটরি ডিউটি, আগাম কর ও সম্পূরক শুল্ক হতে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১.আমদানি ও রফতানিককরা পণ্যের আমদানিকারক হবে রাশিয়ার জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ফেডারেল সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড হাই টেকনিক্যাল স্পেশাল সাইন্টিফিক অ্যান্ড প্রডাকশন এন্টারপ্রাইজ এলিরন কিংবা তাদের নিয়োজিত প্রত্যক্ষ সাব-কন্ট্রাক্টর।
২. প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক প্রত্যায়িত চালানওয়ারি ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্টের সঙ্গে আমদানিকরা পণ্য কেবল ওই প্রকল্পে কাজে ব্যবহার হবে। যা বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক বা সমমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দ্বারা নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যয়নপত্র কাস্টমস স্টেশনে দাখিল করতে হবে।
৩. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো কাজে বা উদ্দেশে ব্যবহৃত হলে আমদানিকারক কাস্টমস কর্তৃপক্ষের যে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা মানতে বাধ্য থাকবেন।
৪. প্রকল্প বাস্তাবায়নের জন্য পুনঃরফতানির শর্তে সাময়িকভাবে আমদানিকরা যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য পণ্যের নাম ও বিবরণসহ তালিকা প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে আমদানির আগেই তা দাখিল করতে হবে।
৫. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয় এমন কোনো পণ্য যেমন- অফিস সরঞ্জামাদি উচ্চ ক্ষমতার এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর, লাইট ও ফিটিংস, সিডান কার, পিক-আপ, জিপ, স্টেশন ওয়াগন, মাইক্রোবাস ও গৃহস্থালি দ্রব্যাদিসহ অন্যান্য পণ্য অব্যাহতিযোগ্য হবে না।
৬. অব্যাহতিপ্রাপ্ত আমদানিকরা পণ্য এনবিআরের অনুমতি ছাড়া বিক্রয়, হস্তান্তর বা অন্যভাবে নিষ্পত্তি করা যাবে না।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে শুরু থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতি মওকুফ সুবিধা প্রযোজ্য রয়েছে। এর আগে গত ৭ জুলাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফিজিক্যাল প্রটেকশন সিস্টেম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আমদানিকরা যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশে প্রযোজ্য অগ্রিম আয়কর থেকে শর্তসাপেক্ষে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
১৯৬১ সালে প্রথম পরামাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে রূপপুরকে বেছে নেওয়া হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেওয়া সেই উদ্যোগ সক্রিয় করে তোলা হয়। ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তি করে সরকার এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দুই দেশ চুক্তি করে।
২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য জেনারেল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই দিন পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
রাশিয়ার এ প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ২শ’ করে মোট ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২শ’ কোটি টাকা)। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১ দশমিক ২শ’ ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০%। আর রাশিয়ার অর্থায়ন বা ঋণ ১১ দশমিক ৩শ’ ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থ্যাৎ রাশিয়ার ৯০ শতাংশ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। আগামী ২০২৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।