
মিরর ডেস্ক : জনপ্রিয়তায় অষ্ট্রেলিয়ার শীর্ষ টিভি অনুষ্ঠান মাস্টারশেফের গ্রান্ড ফিনালে শেষে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত ফিজিয়ান জাষ্টিন নারায়ণ। হৈচৈ ফেলে দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার চৌধুরী হয়েছেন দ্বিতীয় রানার আপ।
অস্ট্রেলিয়ার পারফেক্ট ডিস হিসেবে স্কুইড নুডলসকে স্বীকৃতি দিয়ে জয়ীর তালিকায় নাম লেখানো হয় জাস্টিনের। গ্রান্ড ফিনালের শুরুতে যদিও জাস্টিন কিশোয়ারের পিছনে ছিলেন। তবে ষ্ট্রেস টেষ্ট শেষে শীর্ষ দুই প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে শেষ হাসি হাসেন জাস্টিন।
শেষ পরীক্ষায় অধিক নম্বর যোগ করে নারায়ণের স্কোর দাড়ায় ১২৫। মাত্র এক পয়েন্ট কম পেয়ে দ্বিতীয় স্থানটি তথা ফার্স্ট রানার আপের স্থান দখল করে নেন পিট ক্যাম্পবেল। অন্যদিকে স্ট্রেস স্টেস্টে পিছিয়ে পড়ে ১১৪ নম্বর নিয়ে তৃতীয় হন কিশোয়ার চৌধুরী।
তৃতীয় হওয়ায় কিশোয়ার পান বিশ হাজার ডলারের প্রাইজ মানি। সেই সাথে কোটি বাঙ্গালীসহ বিভিন্ন ভাষাভাষির হৃদয় জয় করার মতো গৌরব। দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী পেয়েছেন ত্রিশ হাজার ডলার। বিজয়ী ২৭ বছর বয়সী জাস্টিন পেয়েছেন আড়াই লাখ ডলার।
অনেক আশা জাগিয়েও লাউ চিংড়ি, বেগুন ভর্তা, খিচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালার মত একের পর এক এমন মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর দর্শকের নজর কাড়লেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর মুকুট পাননি কিশোয়ার।
দীর্ঘ তিন মাস ধরে চলার পর আজ মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। দু’দিন ধরে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় জাস্টিন, পিট ও কিশোয়ার এই তিন ফাইনালিস্টকে নিয়ে। এর চুড়ান্ত পর্বের জন্য তারা তিন জন মনোনীত হন।
প্রথম দিন ফাইনাল ডিশে কিশোয়ার রান্না করেন বাঙালির চিরচেনা পান্তা-ভাত, আলু ভর্তা আর সার্ডিন মাছ ভাজি। এসব রেঁধে নিজের তৃপ্তির কথাও জানান। এই রান্না দেখে ও খেয়ে বিচারকের রীতিমতো অভিভূত হয়ে পড়েন। তিন জনই দশে দশ দেন কিশোয়ারকে।
তবে চূড়ান্ত পর্বের শুরুটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল কিশোয়ারের জন্য। তিনি হাঁসের একটি পদ রান্না করা শুরু করেছিলেন। বিচারকেরা যখন তাঁর রান্না দেখতে এলেন সবকিছু দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘এখানে কিশোয়ার কোথায়?’
তবে চূড়ান্ত পর্বের শুরুটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল কিশোয়ারের জন্য। তিনি হাঁসের একটি পদ রান্না করা শুরু করেছিলেন। বিচারকেরা যখন তাঁর রান্না দেখতে এলেন সবকিছু দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘এখানে কিশোয়ার কোথায়?’
তারপরেই তিনি তার মেন্যু চেঞ্জ করার চিন্তা করেন আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশন করেন বাঙালির চির পরিচিত আলু ভর্তা, পান্তা ভাত আর সার্ডিন মাছ, যেই মাছের স্বাদ অনেকটা ইলিশ মাছের কাছাকাছি। বিচারকরা তার রান্নার প্রশংসা করেন।
চূড়ান্ত পর্বে ফাইনাল ডিশ রেঁধে ৫১ নম্বার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। আর প্রথম স্থানে ছিলেন পিট ৫৩ নম্বার নিয়ে। তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চ্যম্পিয়ন না হলেও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই লাখ লাখ বাঙালির মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।
অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে প্রচলিত নানা ধরনের খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কারণেই ৩৮ বছর বয়সী এই রাঁধুনীকে অন্যসব প্রতিযোগী থেকে আলাদা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না তার।
কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায় হলেও তার পারিবারিক আবহটা সবসময়ই ছিল বাঙালিয়ানা। তার বাবার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে আর মা কলকাতার বর্ধমানের। তারা দুজনে আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
বিদেশে বসবাস করলেও দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা সবকিছু বজায় রেখেছেন কিশোয়ারের বাবা-মা, আর সেটা তারা নিজের সন্তানদের সেগুলো ধারণ করতে উৎসাহিত করেছেন। বাবা-মায়ের উৎসাহ থেকেই বাঙালিয়ানা খাবারের হাত পাকা হয় কিশোয়ারের।