হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : ‘ইচ্ছে শক্তিই বড় শক্তি’ এই উক্তির সত্যতা প্রমাণ করেছেন দিনাজপুরের মরিয়ম এবং বেবি। এই দুই বোন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে, শুধুমাত্র মনের জোরে ভরসা রেখে এগিয়ে চলেছেন ভবিষ্যতের দিকে। তারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চান। জয় করতে চান সংসারের দারিদ্র্য।দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত মুন্নাফ হোসেনের মেয়ে মরিয়ম (২০) এবং বেবি (১৭) স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থী। মরিয়ম গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন, বেবি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
প্রায় দশ বছর আগে তাদের বাবা মারা যান। দুই প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মা সাইদা বেগম। সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তবুও স্বপ্ন লালন করেছেন তিনি। দু’মুঠো খেয়ে না-খেয়ে, মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। কিন্তু মেয়েরা যত উঁচু ক্লাসে উঠছে, ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে তার। পড়াশোনার খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। এদিকে পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চান প্রতিবন্ধী দুই বোন। হতে চান স্বাবলম্বী।
মরিয়ম বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। শত কষ্টের মধ্যেও আমরা দুই বোন লেখাপড়া ছাড়িনি। টাকার অভাবে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঘরে বসে আছি। হয়তো আর লেখাপড়া করতে পারবো না।’ ছোট বোন বেবি বলেন, ‘আমার অনেক বড় হওয়ার ইচ্ছে। শরীরের দিকে বড় হতে পারবো না জানি, তাই মনের ইচ্ছেটাকে বড় করতে চাই। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কি আর ইচ্ছেশক্তি বড় করা যায়?’
তাদের মা সাইদা বেগম বলেন, ‘ওদের বয়স হচ্ছে। শরীরের দিকে বড় না হলেও, মনের দিকে ওরা এখন বড়। ওরা সংসারের কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া করে, কলেজে যায়। ওদের অনেক ইচ্ছে আরও লেখাপড়া করবে। কিন্তু আমি তো আর পারছি না। কেউ যদি একটু সহযোগিতা করতো, মেয়েদের একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতো, তাহলে হয়তো ওরা আরেকটু ভালোভাবে চলতে পারতো।’
এলাকায় নম্র, ভদ্র হিসেবে দু’বোনের সুনাম রয়েছে। রফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে দুটো বড় হয়নি। তাই বলে আমরা কখনও তাদের অবহেলা করি না। তারা ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের। এত প্রতিকুলতার মধ্যেও, ওরা লেখাপড়া করছে এটা আমাদের কাছেও গর্বের বিষয়। তবে সরকারিভাবে যদি তারা কিছু সহযোগিতা পায় তাহলে ভালো হয়।’
হাকিমপুর (হিলি) পৌর মেয়র জামিল হোসেন বলেন, ‘দুই বোনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। নিজেদের বড় করতে তাদের ভিতর যে ইচ্ছেশক্তি কাজ করছে- বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করেছে। তারা সমাজে উদাহরণ তৈরি করেছে।
