
গত দেড় বছর ধরে করোনার মহাদুর্বিপাকে সারা বাংলাদেশ অস্থির, বেসামাল, বিপর্যস্ত। বিভিন্ন সময় সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর অবরুদ্ধতার জাল বিস্তার করে মাঝে মধ্যে শিথিল করার ব্যাপারটিও সামনে এসেছে। নানা বিধিনিষেধ আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মানার মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা গেছে। তবে শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম এখন পর্যন্ত স্থবিরতার কবলে। তথ্যপ্রযুক্তির বলয়ে শিক্ষার মতো জাতি গঠনের কর্মযোগ চালু রাখা ছাড়া অন্য কোন পথ বিবেচনায় আসেনি এখনও।
২০২১ সালে আবারও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রবল প্রতাপে সারাদেশে নেমে আসে বিপণ্নতা। গত বছরের করোনা ছিল রাজধানীকেন্দ্রিক। কিন্তু এবারে অতিমারীর প্রচণ্ড সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় নতুন সংক্রমণ অনুপ্রবেশ করলে আবারও অবরুদ্ধতার জাল বিস্তার করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আক্রান্ত অঞ্চলকে অবরুদ্ধতার আবর্তে এনে রাজধানী থেকে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন করতে সরকারী বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকে। কিন্তু করোনার মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা দেশের অন্যান্য জেলায় ঠিকমতো দেয়া যাচ্ছিল না। আইসিইউ, ভ্যান্টিলেশনের স্বল্পতা এবং অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে রাজধানীতে মরণাপন্ন রোগীদের ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফলে বর্তমানে মৃত্যুর সংখ্যায় সব জেলা থেকে এগিয়ে রাজধানী। বর্তমান সংক্রমণ কিছুটা কমলেও মৃত্যুর হার ওঠানামা করছে সামান্য ব্যবধানে। ফলে করোনার আকালকে এখনও সেভাবে সামলানো যায়নি।
এমন অবস্থায় সরকার ১১ আগস্ট বুধবার থেকে কঠোর লকডাউন তুলে নিয়ে শিথিল ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয়। গণপরিবহনসহ সমস্ত সরকারী-বেসরকারী অফিস-আদালত, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট সব খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি নিয়মবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়টিও অধিক আমলে নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে গত দেড় বছরে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানাটাকে সেভাবে অভ্যাসে রপ্ত করতে পারেনি। সেটাই দৃষ্টিকটুরূপে এখন অবধি দৃশ্যমান। আগে বাসে ২ সিটে ১ জন বসার কঠোর নির্দেশ থাকলেও সেটা কখনই মানা হয়নি বলে অভিযোগও রয়েছে। এবার ঘোষণা এসেছে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী গণপরিবহনে চলাচল করতে পারবে। সেটা সংক্রমণকে আরও তীব্র পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বাস, ট্রেন, লঞ্চ কোন পরিবহনই যাত্রী সেবায় তেমন তোয়াক্কা করে না। ট্রেন এবং বাসের টিকেট কাটার জন্যও লম্বা লাইন দিতে হয়, যা করোনাকে অনেকখানি বাড়িয়েও দিতে পারে। নির্দেশনা আছে গণপরিবহনে সব সিটে যাত্রী বসলেও গাড়ি চলবে অর্ধেক, যা যাত্রীদের বিব্রতকর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি কিভাবে মানা হবে তাও বিবেচনায় আনতে হবে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট, শপিংমল এবং রেস্টুরেন্ট খোলা থাকবে। সেখানেও থাকবে গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড়। সব মিলিয়ে করোনা সঙ্কটকালে আরও দুরবস্থা দেশকে কোন্ পর্যায়ে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে শঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। বিশেষ করে গণপরিবহন ও জমায়েতে স্বাস্থ্যনিয়ম যথার্থভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা, সেদিকেও কঠোর নজরদারি বাড়ানো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়বদ্ধতা।