
মিরর ডেস্ক :‘পঞ্চ পান্ডব’- মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদের সাথে সমান তালে না হোক তরুণরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দল জেতাবেন, দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান রাখবেন- সে আশা বহুদিনের।
কিন্তু কঠিন সত্য হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটে সে অর্থে তরুণরা উঠে আসেননি তেমন। এই সেদিন পর্যন্ত জিততে হলে ওই পাঁচ শীর্ষ তারকার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হতো।
অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরুতে সৌম্য সরকার আর মোস্তাফিজ নিজেদের ম্যাচ উইনার হিসেবে মেলে ধরেছিলেন। সৌম্যতো পাকিস্তান আর দক্ষিন আফ্রিকার মত বড় দলের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। সৌম্যর মত অত বড় দলের সাথে না পারলেও লিটন দাসও রেখেছেন প্রতিশ্রতির ছাপ।
মাঝে নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মিঠুন আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও অনেক সুযোগ পেয়েছেন; কিন্তু কারোরই ধারাবাহিকতা ছিল না। মাঝে-মধ্যে জ্বলে উঠলেও সে অর্থে ম্যাচ জেতানো ভূমিকা নিতে পারেননি কেউই। ম্যাচ উইনারও হতে পারেননি।
তাই ভক্ত, সমর্থকরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন- কারা হবেন ফিনিশার? কারা হবেন ম্যাচ উইনার? তবে বড় সত্য হলো অনেক দেরিতে হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে নতুন তারার দেখা মিলেছে। নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন ধ্রুব আর শামীম পাটোয়ারীরা অতি অল্প সময়ে উঠে এসেছেন এবং বড়দের পাশাপাশি দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান রাখছেন। দল জেতানোর মিশনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও নিচ্ছেন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ওয়ানডেতে নুরুল হাসান সোহান দেখিয়ে দিয়েছেন, তরুণরাও এখন ম্যাচ জেতাতে পারেন। এরপর শামীম পাটোয়ারী পরপর দুদিন একজোড়া ভাল ইনিংস উপহার দিয়েছেন। প্রথম দিন দল জেতাতে না পারলেও পরদিন প্রায় একা তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতিয়ে সাড়া ফেলে দেন তরুন তিনি। আর এখন ঘরের মাঠে সবার মন জয় করেছেন আরেক তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্রথম ম্যাচে ১৭ বলে ২৩ রানের সহায়ক ইনিংস উপহার দেয়া এ বাঁ-হাতি তরুণ বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচে সৌম্য, নাইম শেখ, সাকিব, শেখ মেহেদি এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সাজঘরে ফেরার পর হাল ধরেন তরুণ আফিফ। আরেক সাহসী যোদ্ধা নুরুল হাসান সোহানকে সাথে নিয়ে দল জিতিয়েছেন আফিফ।
১২২ রানের ছোট্ট টার্গেট তাড়া করে ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর যখন বাংলাদেশের আকাশে কাল মেঘের ঘনঘটা, ঠিক তখনই হাল ধরেছেন আফিফ। সঙ্গে সোহান। দুই তরুণ মাঝির হাত ধরে সাফল্যের বন্দরে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।
তরুণদের এই উঠে আসা, বড়রা সবাই সাজঘরে ফেরত যাবার পরও সাহস আর উদ্যম না হারিয়ে দল জেতানোর ভূমিকায় নবীনরা। এটাই নতুনের আবাহন এবং আগামী দিনে আশাবাদী হবার বড় উপাদান।
তরুণদের এই উঠে আসায় খুশি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তার অনুভব ও উপলব্ধি, এখন ধীরে ধীরে তরুণরা উঠে আসছে এবং নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে।
আজ দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটোরিয়ামে শহীদ শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তরুণদের অকুন্ঠ প্রশংসা করে পাপন বলেন, ‘আমাদের যারা নতুন বা তরুণ তাদের অবদানের জন্য যে কত ম্যাচ জিতেছি এর হিসেব নেই। হতে পারে তারা ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পারেনি; কিন্তু তাদের কন্ট্রিবিউশন ছিল না এটা খুব রেয়ার। সেই গত ৮ বছরে আপনি যদি খেলাগুলো দেখেন, সৌম্যর জন্য আমরা দক্ষিন আফ্রিকার সাথে ম্যাচ জিতিনি? তখন তো চিন্তাই করা যেতনা যে আমরা সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ জিতবো। মোস্তাফিজতো তো আমাদের অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে সেটা নিয়ে তো সন্দেহ নাই।’
বিসিবি বিগ বস যোগ করেন, ‘শরিফুল কী আমাদের গুরত্বপূর্ণ পারফরমার হয়ে উঠেনি? তাসকিন যে ফেরত এসছে সেটা কি আমাদের জন্য ভাল না! নাসুমের কথা যদি বলি, আমাদের তো অভিজ্ঞ তাইজুল আছে, মেহেদি মিরাজ আছে তাও আমরা নাসুমকে খেলাচ্ছি। আমরা শেখ মেহেদিকে খেলাচ্ছি। আফিফ ধারাবাহিকভাবে ভালো করে আসছে। শামীম জিম্বাবুয়েতে ভাল খেলেছে। ’
তরুনদের প্রশংসা করে বিসিবি সভাপতির শেষ কথা হলো, ‘সৌম্য, নাইম, সাকিবের পর রিয়াদ, এরপর সোহান আছে, আফিফ আছে। আফিফের পর শামীম আছে। এই শামীম,আফিফ,নাইম,মেহেদি- এরা তো এসব বড় প্লেয়ারের সামনে খেলা দুরে থাক, সামনা সামনি দেখা হয়েছে কিনা সন্দেহ। আপনি মিচেল স্টার্ক, হ্যাজেলউড, অ্যাডাম জাম্পা- ওদের টপ ক্লাস বোলার। প্রথমে নেমে সাহস করে খেলছে এটাই তো অনেক ব্যাপার। আগে তো বাংলাদেশ খেলতে নামলেই আমরা ভাবতাম, বাংলাদেশ হেরে যাবে।’