
অর্থনীতি রিপোর্ট : বর্তমানে করোনা প্রভাবে নাজুক অবস্থানে দেশের অর্থনীতি। এই অবস্থান থেকে স্থায়ীভাবে বেড়ি আসতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়েকে সামনে নিয়ে পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগে মনযোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগে মোট মেয়াদী ঋণের পাঁচ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার (৪ আগস্ট) এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরাও পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগে আরও বেশি মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটা ভালো। কারণ আমাদেরকে পরিবেশবান্ধব অর্থনীতির ক্ষেতে এখন অনেক মনোযোগী হতে হবে। শুধু অর্থ হলেই যে একটি দেশ ভালোভাবে চলে তা কিন্তু নয়। সেই দিক দিয়ে পরিবেশবান্ধব খাতে অর্থায়নে জোর দেয়া সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান জানান, বিশ্বের মধ্যে আমরাই প্রথম সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সার্কুলার দিয়েছিলো। বর্তমানে যে মহামারী চলছে এটা থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে। অর্থনীতিকে আবারও উদ্ধার করতে হবে। আমাদেরকে এখন টেকসই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
আর এটার জন্য সবুজ অর্থনীতিতে বেশি মনোযোগী হতে হবে। কারণ করোনার মহামারী আমাদের মাঝে দেড় বছর হলো চলে এসেছে। অন্যেিদক জলবায়ু পরিবর্তন অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এটার ক্ষতি আরও অনেক দিন থাকবে। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় এখন সারাবিশ্বকে সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের বেশি মনোযোগীত হতে হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান মহামারী থেকে অনেকে বেশি চ্যালেঞ্জ। করোনা মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তন এসব মিলেমিশে একটা বড় সংকট তৈরি করেছে। বর্তমান সময়ে আমাদের এমন একটি অর্থনীতি বেচে নিতে হবে, যেটা আসলেই শর্তিকার অর্থের অর্থনীতি।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে যে অর্থনীতি চলছে, এটা শুধু মাত্রা অর্থের জন্য অর্থ এটা একটি বায়ুবীয়। এই পদ্ধিতিতে গুটি কয়েক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় তবে বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। তিনি আরও বলেন, আমাদের ব্যাংকগুলোকে যদি শেষ পর্যন্ত প্রকৃত অর্থনীতিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা ভালো। বিশেষ করে সবুজ অর্থনীতি। আমাদের আরএমজি খাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যার ফল আমাদের রপ্তানিখাতে ভালো প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক বকেয়া ঋণ ও অগ্রিম স্থিতি থেকে কর্মচারী ঋণ, মোট শ্রেণিকৃত ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ড ঋণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশের পাঁচ শতাংশ পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এর আগের নির্দেশনায় ক্রেডিট কার্ডের ঋণের কথা উল্লেখ ছিল না।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণের জন্য পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের হার নির্ণয়ে বিতরণকৃত মোট মেয়াদী ঋণের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক এ হার কমপক্ষে ৫ শতাংশ অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প অর্থায়নের ক্ষেত্রে উক্ত হার বিবেচিত হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমের অর্জন তাদের ক্যামেলস রেটিং মূল্যায়নে বিবেচিত হবে।
এছাড়া পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন সহযোগিতা বৃদ্ধি, পরামর্শ এবং ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সকল তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পটেনশিয়াল সকল শাখাসমূহে ডেডিকেটেড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট হেল্প স্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ গ্রিন ব্যাংকিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান কার্যালয়ের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইউনিটের কর্মপরিধির আলোকে উক্ত হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।