
শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ভাঙা পা নিয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের শয্যায় শুয়ে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন একাব্বর মাল (৬০) ও তার স্ত্রী ফুলমতি বেগম (৫০)। তবে তাদের পায়ের ব্যথার চেয়ে যেন মনের ব্যথা আরও বেশি। কেননা তাদের সন্তানই পিটিয়ে তাদের পা ভেঙে দিয়েছে।
ঘটনাটি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের সারেংকান্দি গ্রামের। গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বিকালে এই দম্পতির বড় ছেলে শরীফ মাল (২৬) ও তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার তাদের পিটিয়ে পা ভেঙে ও মাথা ফাটিয়ে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাজিরার বিলাশপুর ইউনিয়নের সারেংকান্দি গ্রামের বাসিন্দা একাব্বর মাল পেশায় কৃষক। তার স্ত্রী ফুলমতি বেগম গৃহিণী। তাদের চার মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে শরীফ মাল তিন বছর আগে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। এরপর থেকে বাব-মায়ের সঙ্গে তার বিরোধ। কিছুদিন ধরে শরীফ তার নামে জমি লিখে দেওয়ার জন্য বাবা-মাকে চাপ দিতে থাকেন। তারা জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় প্রায়ই মারধর করতেন। গত বৃহস্পতিবার শরীফের স্ত্রী মুন্নি আক্তারের সঙ্গে ঝগড়া হয় ফুলমতি বেগমের। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ শরীফ তার বাবা-মাকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেন। লাঠির আঘাতে মায়ের মাথা ফেটে যায়। মারধরে শরীফ ও তার স্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হন একাব্বর মালের চাচাতো ভাই মজিদ মাল। তিনি একাব্বর মালের বসতঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন।
গ্রামবাসী তাদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। শনিবার (১৭ জুলাই) তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাদের পায়ের ও মাথার চিকিৎসা করা হয়।
জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুনীর আহমেদ খান বলেন, ‘সার্জারি ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা চলছে। ভারী ও শক্ত কোনও কিছুর আঘাতে তাদের পায়ে ফ্যাকচার (ভেঙে) হয়েছে। প্লাস্টার করা হয়েছে, সেরে উঠতে কয়েকদিন সময় লাগবে।’
আব্বাস ও ফুলমতি দম্পতির মেয়ে সাবিনা আক্তার বলেন, ‘তিন বছর ধরে ভাই (শরীফ) আমাদের জ্বালাতন করেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ভাবি ও আমাদের এক চাচা। তারা আমাদের সব সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য মা-বাবাকে মারধর করেন। বাবা-মায়ের পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করেছি।’
সদর হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে একাব্বর মাল বলেন, ‘নিজের সন্তান বাবা-মাকে মারধর করতে পারে? এভাবে মেরে পা ভেঙে দেবে ভাবতে পারিনি। আমার চাচাতো ভাই মজিদ মাল কারসাজি করে আমাদের জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। এখন আমার ছেলেকে হাত করে বাকি সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিচার আমি কার কাছে চাইব?’
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বাবা-মাকে মারধর করার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্তদের ধরতে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা পালিয়েছেন।’