
নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের গোলাবাড়ীর এক আদিবাসী গ্রামে গুজবের কারণে গ্রামসুদ্ধ মানুষ এখনও টিকা গ্রহণ করেননি। সারাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকা কার্যক্রম চললেও, এ গ্রামের একজনও তা গ্রহণ করেনি।গ্রামটিতে ৩০টির মত পরিবারে প্রায় ১শ’ ৪০ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির লোকজন বসবাস করেন।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাবাড়ী আদিবাসী গ্রামবাসীরা মনে করেন, করোনার টিকা গ্রহণ করলে নাকি মারা যায়, পঙ্গু হয়, পায়ে পানি ধরে। এ কারণেই তারা টিকা গ্রহণ করেননি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গুজব-অপপ্রচারের কারণে তারা এমন কাজ করেছেন।
গোলাবড়ি গ্রামের বৃদ্ধ গনেশ মার্ডি বলেন, টিকা নিলে মানুষ মারা যাবে, সেই ভয়ে আমরা টিকা নেইনি। বাসন্তি মার্ডি নামের আরেকজন বলেন, এমনিতেই ব্যথা, টিকা নিলে পা নাকি ফুলে যাবে,আমরা গরিব মানুষ পা ফুলে গেলে সংসারের চালাবো কিভাবে। গেদু হেমব্রম বলেন,‘আমার একটু শ্বাসকষ্ট আছে। কমোরটা ব্যাথা করে। প্রেস্রাবের সমস্যা হয়। বিভিন্ন কারনে টিকা নেইনি।আর টিকা নিলে নাকি রোগ বাড়ে। মানুষের মুখে শুনেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পরিকল্পিতভাবে এই গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর মাঝে বিভিন্ন অপপ্রচার আর গুজব ছড়ানো হয়েছে। গ্রামটিতে বসবাসরতদের মধ্যে অনেক পরিবার অশিক্ষিত। বেশিভাগ লোক কায়িক শ্রম করেই সংসার চালায়। একারনেই অনেকটা টিকা বিমুখ আছেন তারা।
আদর্শ মার্সাল যুব উন্নয়ন স্পোটিং ক্লাব নামে এক সংগঠন গ্রামবাসীদেরকে টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উপলক্ষে গ্রামবাসীদের কাছে টিকার গুরুত্ব এবং অপপ্রচারে সাড়া না দেওয়ার জন্য স্থানীয় গীজায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিয়া কাসেম সেফা টিকার সুফল বিষয়ে আদিবাসীদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেন। টিকার সুফল সম্পর্কে বিভিন্নভাবে তাদের বুঝানোর পর, অবশেষে গ্রামের সকলে টিকা নিতে রাজি হন। পরে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্রামের প্রায় একশ’ জনকে টিকার নিবন্ধন করে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে গোলাবাড়ি আদর্শ মার্সাল যুব উন্নয়নে কোষাধ্যক্ষ আলমগীর মুর্মু বলেন, গ্রামবাসীদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করেছি গ্রামের মানুষদের একত্রিত করার। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাদিয়া কাসেম সেফা বলেন, তারা বিভিন্ন অপপ্রচারের কারণে টিকা গ্রহণ করেননি। তাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, গ্রামবাসীরা টিকা গ্রহণ করবেন বলে কথাও দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে মার্সাল যুব উন্নয়নে সেচ্ছাসেবীরা তাদের ফ্রি নিবন্ধন করে দিচ্ছেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহাজাহান আলী বলেন, তুলনামূলক ওই গ্রামের বাসিন্দারা বেশিরভাগ অশিক্ষিত। তারা কায়িক শ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন। টিকা নেয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে পর্যাপ্ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।