
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : ফেসবুকে মাদকসহ ছাত্রলীগ নেতার স্ট্যাটাস শেয়ার দেওয়াকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ধীমান দাসের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের কয়েকজন কর্মী তাঁর ওপর এই হামলা চালান। হামলায় আহত ধীমানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় খানসামা থানায় ৭ জন নামীয় আসামী করে অজ্ঞাত নামা ৩০/৩৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এদের মধ্যে এজাহার নামীয় আসামী উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ন আহবায়ক সাজু ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলার পাকেরহাটে চরনকালী মন্দিরের সামনে বাইপাশ সড়কে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে খানসামা উপজেলা ছাত্রলীগের এক কর্মী মাদকসহ পুলিশের হাতে আটক হন। সেই বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়েছিলেন ধীমান দাস। এতে ক্ষিপ্ত হন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল করিম ও ছাত্রলীগ-মৎস্যজীবী লীগের একাংশ নেতাকর্মী। এরই জেরে গত ২১ জুন গাড়পাড়া পাইটাকুড়া বাসন্তী মন্ডপে ভিত্তি প্রস্থর অনুষ্ঠানে ধীমান দাসের সাথে রেজাউল করিম ও ছাত্রলীগ-মৎস্যজীবী লীগের কয়েকজন নেতার তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরে প্রাণনাশের হুমকি দিলে ধীমান দাস ২৪ জুন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনার ৬ দিন পর বুধবার বিকেলে পাকেরহাটে বাইপাসে চরনকালী মন্দির প্রাঙ্গণে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের মিটিং চলাকালীন সময়ে পেট্রোল পাম্পের সামনে রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের নেতা-কর্মীরা ধীমান দাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে সভা শেষ করে রাস্তায় আসা মাত্রই রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ৩৫ থেকে ৪০ জন ছাত্রলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ধীমান দাসের ওপর হামলা করেন। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই ঘটনার পর পাকেরহাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হাতেম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, ওসি শেখ কামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা আহমেদ শাহ্ ও সাধারন সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার রায়, আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ রফিকুল সহ পূজা উদযাপন পরিষদ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, ধীমান দাসের মাথায় দুটি সেলাই দেয়া হয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন, কয়েক দিন আগে ছাত্রলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মাদকের মামলা হয়। ধীমান দাস সেই বিষয়টি ফেসবুকে শেয়ার করেন। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে ধীমান দাসের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে আমি বিষয়টি মীমাংসা করতেই ঘটনাস্থলে যাই। হামলার সঙ্গে আমি জড়িত নই। তা ছাড়া আমি এখন ছাত্রলীগ করি না। আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
এদিকে দিনাজপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার রায় জানান, ধীমান দাসের ওপর হামলার প্রতিবাদে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ বিষয়ে খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ কামাল হোসেন বলেন, হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার নামীয় আসামীদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।