
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : ২০০৯ সালের কথা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়া গ্রামে জয় প্রকাশ পাল ও কৃষ্ণা রানীর ঘরে আনন্দের বন্যা। তাঁদের কোলজুড়ে আসবে সন্তান। স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে ভর্তি করেন জয় প্রকাশ। হাসপাতালের অস্ত্রোপচারকক্ষের (ওটি) বাইরে অপেক্ষার প্রহর শেষে সন্তানের জন্ম হলো, কান্নার শব্দও শুনলেন জয় প্রকাশ।
তবে সকাল গড়িয়ে বিকেল হলেও সন্তানের মুখ দেখতে দেওয়া হয়নি জয় প্রকাশকে। মনে খটকা লাগে তাঁর। বিকেল চারটায় জয় প্রকাশ জানতে পারেন, যমজ কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছেন। আনন্দ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সে আনন্দ স্থায়ী হয়নি। পরক্ষণেই জানতে পারেন, দুটি সন্তান জন্ম নিলেও তাদের পেট জোড়া লাগানো। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে জয় প্রকাশের।
ঘটনাটি ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর উপজেলা শহরের ল্যাম্ব হাসপাতালের। জন্মের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নাম রাখে মণি-মুক্তা। প্রায় ছয় মাস পর ২০১০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসক এম আর খান সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করেন মণি-মুক্তাকে।
সেই মণি-মুক্তা পা রেখেছে ১৩ বছরে। দুজন স্থানীয় ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। প্রতিবছর মা-বাবা বাড়িতে তাদের জন্মদিনের আয়োজন করেন। এবারও নতুন জামাকাপড় কেনা হয়েছে তাদের জন্য। বড় ভাই সজল কুমার ও বোন দিশারি রানী বেলুন, জরি-চুমকি দিয়ে বাড়িটাকে সাজিয়েছে। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন স্থানীয় লোকজনও। রবিবার সকালে পালপাড়ায় নিজ বাড়িতে মণি-মুক্তার জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়। মণি-মুক্তাকে ঘিরে স্থানীয় লোকজন যেন উৎসবে মেতে ওঠেন।
মণি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ বলেন, ‘মণি-মুক্তা যখন জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়, তখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। বাড়ির পাশ দিয়ে কেউ গেলে মুখটা ঘুরিয়ে নিত। আমাদের দিকে মুখ তুলে কেউ কথা পর্যন্ত বলত না। অনেকে দেখতে এসে কুকথা বলত। মেয়ে দুটোকে সুস্থ অবস্থায় পেয়ে মনে হচ্ছিল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাইছি। মণি-মুক্তা আমাদের ঘরে আনন্দ এনে দিয়েছে। অভাবের মধ্যেও সেই সময়ের কষ্টগুলোকে ভুলে যেতে প্রতিবছর আয়োজন করে মেয়েদের জন্মদিন উদ্যাপন করি।’