
মিরর ডেস্ক : মহান আল্লাহ সুবিচারকারী, তিনি সুবিচার পছন্দ করেন। মানুষকেও তিনি সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অবিচার করতে নিষেধ করেছেন। এই সুবিচার নিজের প্রতি, সমাজের অন্য মানুষের প্রতি। আর তা সম্ভব হবে আল্লাহর ভয়, তাঁর আনুগত্য, তাঁর দ্বিন প্রতিষ্ঠা এবং তাঁর সামনে নিঃশর্ত আনুগত্যের মাধ্যমে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হ্যাঁ, যে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করে এবং সত্কর্মপরায়ণ হয়, তার ফল তার রবের কাছে আছে এবং তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১১২)
সুবিচার আল্লাহর নির্দেশ : আল্লাহ মানবজাতির প্রতি সুবিচার ও ন্যায়বিচার করার সাধারণ নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমা লঙ্ঘন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯০)
ঈমানের দাবি সুবিচার : ঈমানের সঙ্গে সুবিচারের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সুবিচার ঈমানের দাবি। এ জন্য আল্লাহ শিরককে জুলুম তথা অবিচার আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই শিরক চরম অবিচার।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৩)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘ন্যায়বিচার কোরো, কেননা তা আল্লাহভীতির নিকটবর্তী।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)
মধ্যপন্থা সুবিচারের মূলকথা : অতি উদারতা বা অতি কঠোরতার বিপরীতে মধ্যপন্থা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। আল্লাহ মধ্যপন্থার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘এভাবে আমি তোমাদের বানিয়েছি মধ্যপন্থী জাতি, যেন তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী (দৃষ্টান্ত) হতে পারো। আর রাসুল তোমাদের পক্ষে সাক্ষী হতে পারেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৩)
সুবিচার চাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে
পবিত্র কোরআনে সুবিচারসংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো যাচাই করলে দেখা যায়, ইসলাম জীবনের প্রতিটি স্তরে সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছে। যেমন—
১. কথায় সুবিচার : সত্য বলা ও ভালো কথা বলা হলো কথার সুবিচার। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ন্যায্য বলবে—স্বজনের সম্পর্কে হলেও। আর আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫২)
২. বিচারের সময় সুবিচার : আল্লাহ বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, ‘যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার করো, তখন ন্যায়সংগত বিচার করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
৩. সুবিচার করো নিজের প্রতিও : শুধু অন্যের প্রতি নয়, ইসলাম নিজের প্রতিও সুবিচার করার নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমার ওপর তোমার রবের অধিকার আছে, তোমার ওপর তোমার নিজের অধিকার আছে, তোমার ওপর তোমার পরিবারের অধিকার আছে। সুতরাং প্রত্যেককে তার অধিকার বুঝিয়ে দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬৮)
৪. পরিবারের প্রতি সুবিচার : সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের প্রতি সুবিচার করার নির্দেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় কোরো এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সুবিচার কোরো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৮৭)
৫. প্রতিবেশীর প্রতি সুবিচার : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৬)
সুতরাং মানবজীবনের সর্বত্র সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। আল্লামা ইবনে হাজম (রহ.) বলেন, ‘যে অন্যের প্রতি সুবিচার করতে চায় সে যেন নিজেকে প্রতিপক্ষের স্থানে কল্পনা করে। এটাই তার মনে অনুশোচনা জাগ্রত করবে।’ (আদাবুন নুফুস, পৃষ্ঠা ২০৫)