সমশের আলী : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে ‘আগ্রহী নন’ দলটির জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। পরে জিএম কাদেরের প্রেস সচিব-২ খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
জাতীয় পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন। আজ সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সাথে ফোনালাপে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে দল সঠিক ভাবে চলছে বলেও তিনি (রওশন) মনে করেন। সেই সাথে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হিসাবে তার সাফল্য কামনা করেছেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও বেগম রওশন এরশাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘অপরদিকে, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব রাহাগির আল মাহি শাদ এরশাদ দুপুরেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে ফোন করে বলেছেন, বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর দোয়ায় শরিক হতে সকালে প্রেসিডেন্ট পার্কে গিয়েছিলেন। এর বাইরে তিনি কোনো কিছুর সাথে সম্পৃক্ত নন।’
যদিও এ বিষয়ে শাদ এরশাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বুধবার রাজধানীর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে গিয়ে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ (এইচ এম) এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন তার ছেলে শাহতা জারাব এরিক। কমিটিতে এরশাদের স্ত্রী সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এবং এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদকে। এ ছাড়া এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করে বুধবার এই নতুন কমিটির ঘোষণা দেন বিদিশার ছেলে এরিক। এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ মাহফিলে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে অনুষ্ঠানের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে রওশন এরশাদের নাম লেখা থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এরিক বলেন, ‘আমার বাবা যখন অসুস্থ, তখন রাতে আমার বাবাকে জিম্মি করে আমার চাচা জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান পদ লিখেয়ে নিয়েছেন। জাতীয় পার্টি আজ ধ্বংসের মুখে। তিনি অবৈধভাবে চেয়ারম্যান পদটি নিয়েছে আমরা তাকে মানি না।’
এর প্রতিক্রিয়ায় এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দল করার অধিকার সবারই আছে, তবে একসঙ্গে দুটি দল করা যায় না। আর নির্বাচন কমিশন থেকে দলের নিবন্ধনও নিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কে, কাকে, কী ঘোষণা দিয়েছে তা জানি না। যে কেউ যেকোনো ঘোষণা দিতে পারে।’
এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ মাহফিলে রওশন উপস্থিত না থাকলেও তার ছেলে সাদ ছিলেন। এ ছাড়া এরিকের মা বিদিশাও ছিলেন। জাতীয় পার্টিকে ‘জঞ্জালমুক্ত’ করার কথা উল্লেখ করে সাদ এরশাদ বলেন, ‘বেশি পলিটিক্যাল কথা বলতে আসিনি। আজ আমার আব্বার মৃত্যুবার্ষিকী। সবাই আমাদের দলের প্রতিষ্ঠার জন্য দোয়া করবেন। আমার আম্মা বিরোধীদলীয় নেতা, উনার বয়স হয়েছে। উনার জন্য দোয়া করবেন। আজকে আসতে পারেননি।’
মিলাদ মাহফিলে জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে ‘অবৈধ’ দাবি করে এরিক বলেন, ‘তার কাছ থেকে দলকে বাঁচাতে হবে। আমার মা রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে এবং কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আরেক মা বিদিশা এরশাদ ও ভাই রহগীর আল মাহি সাদ ওরফে সাদ এরশাদের নাম ঘোষণা করছি। আর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করছি এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদের নাম।’
এরিকের এই ঘোষণার সময় তার পিঠ চাপড়ে উৎসাহ দেন বিদিশা। তিনি বলেন, ‘এরিকের প্রস্তাবিত নতুন কমিটি কাজ শুরু করবে। আমার দুই ছেলে সাদ ও এরিককে নিয়ে এরশাদের স্বপ্নের দেশ গড়তে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করব আমরা।’
এইচ এম এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খানও উপস্থিতি ছিলেন।