
অর্থনীতি রিপোর্ট : বিগত যে কোনও সময়ের চেয়ে দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল আমদানি বেড়েছে। শুধু তাই নয়, গত এক বছরে চাল আমদানির এলসি খোলার হার বেড়েছে ৩ হাজার ৩শ’ ৫৬ শতাংশ। যা যেকোনও সময়ের চেয়ে রেকর্ড। আর এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে বেড়েছে ৪শ’ ৯৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে চাল আমদানি বাড়লেও বাজারে কোনও প্রভাব নেই দামে। সরকারি তথ্যই বলছে, দেশে মোটা চালের কেজিই এখন ৪৮ টাকার ওপরে। সরু চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬৮ টাকার মতো।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক বছরে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সরু চালের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ বেশি। বাজারে চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। আর মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশের কাছাকাছি।
বাজারের তথ্য বলছে, গরিবের মোটা চালের দাম এখন ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি। আর চিকন চালের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে দেদার চাল আমদানি হচ্ছে। আর এর ফলে সরকারি গুদামগুলোতে চালের মজুত বেড়ে ১৩ লাখ টন ছাড়িয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ১৯ আগস্ট পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মজুদ ১৬ দশমিক ৮৩ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ১৩ দশমিক ৪ লাখ মে টন। গমের মজুদ ১ দশমিক ৯৭ লাখ মেট্রিক টন। ধান মজুদ রয়েছে ১ দশমিক ২৫ লাখ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই- জুন) চাল আমদানির জন্য ৮৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০২০) একই সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৩শ’ ৫৬ দশমিক ৮৯ %। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে মাত্র ২ লাখ ৫৩ হাজার ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত অর্থবছরে চাল আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৪ কোটি ২ লাখ ডলারের; অর্থাৎ গত এক বছরে এলসি নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ৪শ’ ৯৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭২ হাজার ডলারের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য সবমিলিয়ে ৬ হাজার ৭শ’ ৩ কোটি ৪২ লাখ (৬৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
অবশ্য চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে গত বছরের শেষের দিকে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। একইসঙ্গে সরকারি উদ্যোগেও চাল আমদানি অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার তাগাদা দেওয়ার পর মার্চ থেকে তারা চাল আমদানির গতি বাড়িয়ে দেয়। এখনও সেটা অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের শুরু থেকেই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি গুদামে মজুত এবং বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়।