
অর্থনীতি রিপোর্ট : কৃষিকে আরও এগিয়ে নিতে এবং কৃষি পণ্য বহুমুখীকরণে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ২ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা: আগামীর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময় কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নেই কাজ করে গেছেন। বিদ্যুৎসহ অনেক খাতেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিতে আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। দেশে ও দেশের বাইরে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে।
‘কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ২ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করে কৃষি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করব। এর মাধ্যমে কৃষি বিপ্লব ঘটবে, কৃষকরা সরাসরি লাভবান হবে। এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। তাই কিছু আলু রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, আজকের কৃষির যতটুকুই উন্নয়ন, তার ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পরে যখন কোষাগার ছিল শূন্য, কৃষিতে ছিল নাজুক অবস্থা। সে সময়েই কৃষকের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কৃষি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। কৃষিতে ব্যাপক রূপান্তর ঘটাতে চেয়েছিলেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্র পরিচালনার হাল ধরেন, তখন চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, অর্থনীতির ভগ্ন অবস্থা, কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ, বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার দেশে বঙ্গবন্ধুর নিকট সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য নীতিনির্ধারণ করা। প্রায় ২০০ বছর ধরে অবহেলিত কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়ন এবং শিল্প ও বাণিজ্যকে পুনরুদ্ধার করাও চ্যালেঞ্জ ছিল।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের এই নেতা জানান, সরকার গঠনের পরপরই বঙ্গবন্ধু কৃষি উপকরণ, কৃষি গবেষণা, নতুন জাত উদ্ভাবন ও কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেন। কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাজেটে ৬০ ভাগ পল্লী এলাকায় উন্নয়নের জন্য ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু প্রায় ২২ লাখেরও বেশি কৃষক পরিবারের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেন।
জসিম উদ্দিন বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পপণ্য এবং পচনশীল কাঁচা সবজি, আলু, ফলমূল, ও বীজ জাতীয় ফসল দীর্ঘ সময় রাখার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আধুনিক হিমাগার স্থাপনে দেশ এখনও পিছিয়ে আছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এসব হিমাগার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দর্শনে গ্রাম বাংলার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর সংযোগ। কৃষক সন্তানসহ বাঙালি জাতিকে তিনি গভীর ভালোবাসতেন। এ ছাড়া, কৃষিতে বর্তমান সরকারের ব্যাপক প্রণোদনা উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে এবং এতে তরুণরাও উৎসাহিত হচ্ছে ।
ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তব্য রখেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি. অ্যান্ড চ্যানেল আইয়ের ফাউন্ডার পরিচালক শাইখ সিরাজ, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খাঁন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
সেমিনারে সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।