
মিরর ডেস্ক : জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম সেই আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামত দিনেও আমার খুবই নিকটে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে আমার কাছ থেকে বহু দূরে থাকবে তারা হলো—বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ ও অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তম চরিত্র ও গুণাবলি ধারণে উৎসাহিত করেছেন এবং মন্দ স্বভাব থেকে নিরুৎসাহিত করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, উত্তম চরিত্রের অধিকারীরা কিয়ামতের কঠিন সময়ে তাঁর সবচেয়ে নিকটে থাকবে এবং যারা মন্দ স্বভাব তথা অহংকারী ও নির্লজ্জ হবে তারা নবীজি থেকে বহু দূরে অবস্থান করবে। উত্তম চরিত্র অর্জনের পুরস্কার
হাদিসে উত্তম চরিত্র অর্জনের একাধিক পুরস্কার ঘোষণা করেছে। যার কয়েকটি হলো—
১. জান্নাতে বাড়ি লাভ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)
২. ঈমানের পূর্ণতা লাভ : মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুমিনদের ভেতর তার ঈমানই বেশি পরিপূর্ণ, যার চরিত্র যত সুন্দর।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৬৮২)
৩. পরকালে মুক্তি : নবীজি (সা.) বলেন, ‘মিজানে (দাঁড়িপাল্লায়) উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ভার আর কিছু হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)
জিহ্বার তিন বিপদ
হাদিসে জিহ্বার তিনটি বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। হাদিস বিশারদরা বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করেন—
ক. বাচাল হওয়া : যারা বেশি কথা বলে এবং কথাকে সুশোভিত করতে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অশালীন কথার আশ্রয় নেয়।
খ. ধৃষ্ট হওয়া : যারা নিজের সম্পর্কে বাড়িয়ে বলে, মিথ্যা অহংকার করে এবং মানুষকে তাচ্ছিল্য করে।
গ. অহংকার করা : নিজের ভাষাগত দক্ষতা নিয়ে অহংকার করে। আত্মমুগ্ধতা থেকে দীর্ঘ কথা বলে এবং অন্যকে কথা বলার সুযোগ দেয় না, অন্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না।
জিহ্বার বিপদ থেকে সাবধান
জিহ্বার অসংযত ব্যবহার মানুষকে ইহকাল ও পরকালে বিপদগ্রস্ত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ তার অসংযত কথাবার্তার কারণেই অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্তি হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৭৩)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনো আল্লাহর সন্তুষ্টির কোনো কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনো আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই। অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৮)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে উত্তম চরিত্র ধারণ এবং জিহ্বার বিপদ থেকে বাঁচার তাওফিক দিন। আমিন।