
মিরর ডেস্ক :‘সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ’ ওমানের রাজধানী মাস্কাটের বাউশার এলাকায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝাড়বাতি ও দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্পেটের জন্য প্রসিদ্ধ। যদিও একসময় বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্পেট আর ঝাড়বাতির জন্য নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছিল গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা হাতছাড়া হয়ে যায় ।
সর্ববৃহৎ কার্পেটের রেকর্ডটি হাতছাড়া হয় ২০০৭ সালে আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদে এর চেয়ে বড় কার্পেট স্থাপনের মাধ্যমে। আর ঝাড়বাতির রেকর্ডটি হাতছাড়া হয় ২০১০ সালে কাতারের দোহায় আল হাতমি ভবনের লবিতে সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি বসানোর পর।
১৯৯২ সালে সুলতান কাবুস মসজিদটি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। মসজিদের নান্দনিক নকশা তৈরির জন্য আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতার। এতে অংশ নিয়েছিলেন দেশি-বিদেশি নামকরা নকশাবিদরা। পরবর্তী সময়ে প্রায় চার লাখ ১৬ হাজার বর্গমিটার জমির ওপর মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। কাজটির দায়িত্ব পায় বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান কার্লিয়ন আলাওই। মাস্কাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জাতীয় জাদুঘর, মজলিশ, রয়েল ওপেরা হাউসের মতো ওমানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এই কম্পানিরই বানানো। স্থপতি ইরাকের মোহাম্মদ সালেহ মাকিয়া এবং লন্ডনের কুড ডিজাইন কম্পানির তত্ত্বাবধানে ছয় বছর চার মাসে মসজিদটি তৈরি হয়। এতে কাজ করেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। মনোমুগ্ধকর এই স্থাপত্যে ব্যবহার করা হয় বিশ্বের নামিদামি সব উপকরণ। ইতালি, মিসর, ভারত থেকে আনা হয় মার্বেল ও মোজাইক পাথর। অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে ভাস্কর্য তৈরিতে অংশ নেন ওমানের ৬০ ও ভারতের ২শত জন কারুশিল্পী, যাঁরা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে বেলে পাথর, মার্বেল পাথর ও স্টেইনড গ্লাসের সমন্বয়ে গড়ে তোলা নকশার পরতে পরতে ফুটিয়ে তুলেছে সাগর আর মরুভূমির মিশেলে গড়ে ওঠা আবহমান মরু-জীবন। যা সত্যি হৃদয়কাড়া। অবশেষে ২০০১ সালে উদ্বোধন করা হয় আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যের গৌরবময় নিদর্শন ‘সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ’।
মসজিদটির মূল নামাজ ঘরের আয়তন সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি। যেখানে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন প্রায় সাত হাজার মুসল্লি। মসজিদের প্রবেশের সময় মুগ্ধ করে দেয় কারুকাজ করা উঁচু দরজা। ভেতরে ঢুকতেই মন জুড়াবে সাদা ও গাঢ় ধূসর মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত চারদিকের দেয়াল। গায়ে লতাপাতার মোটিফ ও জ্যামিতিক নকশার ম্যুরাল। মেঝেতে বিছানো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্পেট, যার আয়তন চার হাজার ৩শ’ ৪৩ বর্গমিটার। ওজন ২১ মেট্রিক টন। বোনা হয়েছে ক্লাসিক্যাল, তাব্রিজ, কাশান এবং ইসাফাহান ঐতিহ্যের নকশায় ১শ’৭০ কোটি সুতার বন্ধনে। নানা রঙের বিন্যাস ২৮টি স্তরে। সম্পূর্ণ হাতে বোনা এই নান্দনিক কার্পেটটি বুনতে কাজ করেছেন ৬শত ইরানি নারী। সময় লেগেছে চার বছর।
ছাদের ঠিক মাঝ বরাবরে আছে কেন্দ্রীয় গম্বুজ, যার ভেতরটা মার্বেল কলাম কাঠামোর মধ্যে খোদাই করা রঙিন গ্লাসের বেশ কিছু ছোট জানালা এবং চীনা মাটির বাসন প্যানেলে অলংকৃত। তাতে শোভা পাচ্ছে একসময় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের খ্যাতি কুড়ানো ঐতিহাসিক ঝাড়বাতিটি। মেটাল বিটের ওপর ২৪ ক্যারেটের সোনার প্রলেপের এই ঝাড়বাতিও বানাতে সময় লেগেছিল চার বছর। এর ওজন সাড়ে আট মেট্রিক টনেরও বেশি। উচ্চতা ১৪ মিটার। ছয় লাখ টুকরা অস্ট্রিয়ান স্বরভস্কি ক্রিস্টাল, ১ হাজার ১শ’ ২২টি হেলোজেন বাল্ব। এটি তৈরি করেছিল জার্মানের ফৌস্টিগ কম্পানি। এটি ছাড়াও মসজিদটিকে উজ্জ্বল করে রেখেছে আরো ১৬টি ছোট ঝাড়বাতি।
মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে অসংখ্য ছোট খুপরির প্যাটার্নে মোজাইকে আচ্ছাদিত রাজকীয় মেহরাবটি। লতা-পাতার মোটিফ ও আলংকারিক নকশার মাঝখানে আল্লাহর নাম ও কোরআনের আয়াতের ক্যালিওগ্রাফি যে কারো মন শীতল হয়ে উঠবে।
সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদের রাজকীয় পাঁচটি মিনার মসজিদের বাইরের সৌন্দর্য আরো বেশি ফুটিয়ে তুলেছে। মূলত এই পাঁচটি মিনারকে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ প্রতীকস্বরূপ সম্মিলন করা হয়েছে। মসজিদে আসা জ্ঞান পিপাসু মুসল্লিদের কথা মাথায় রেখে মসজিদ কমপ্লেক্সে নির্মাণ করা হয়েছে ইসলামিক সায়েন্স ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া রয়েছে ৩শত জন ধারণক্ষম সেমিনার রুম এবং বিশাল গ্রন্থাগার, যাতে স্থান পেয়েছে প্রায় ২০ হাজার বই।