
গাজীপুর প্রতিনিধি : নন্দ দুলাল-নীলা রাণী দম্পতির একমাত্র সন্তান অমিত সাহা। অমিতকে নিয়েই স্বপ্ন ছিল তাদের। ১২ বছর আগে ব্যবসায়ী নন্দ দুলালের মৃত্যু সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে থেমে যাননি মা নীলা রাণী। স্বামীর মৃত্যুতে একমাত্র সন্তান অমিতকে নিয়ে এক নতুন জীবনযুদ্ধে নামেন তিনি। মেধাবী অমিত চিকিৎসক হওয়ার মধ্য দিয়ে মা ও প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণ করেন।
চিকিৎসক ছেলেকে নিয়ে মা নীলা রাণী এঁকেছিলেন একটি সুখের মানচিত্র। ছেলেকে বিয়ে দিয়ে নতুন বউ এনে সংসার সাজাবেন। কিন্তু একটি নৌ দুর্ঘটনা তার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই এলাকায় নৌ ভ্রমণে গিয়ে খিরু নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ডা. অমিত সাহার।
নীলা রাণী একমাত্র ছেলে ডা. অমিত সাহাকে নিয়ে গাজীপুর শহরের উত্তর বিলাশপুর এলাকায় থাকতেন। অমিত ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ছিলেন। তিনি গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। নৌ দুর্ঘটনায় বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নীলা রাণী। বাকি জীবনটা স্বজনহারা হয়ে বুকে পাথরচাপা দিয়ে বেঁচে থাকারও যেন নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না এই মা।
নৌকাডুবিতে নিহত ডা. অমিতের চাচা সুনীল সাহা বলেন, ভাই মারা যাওয়ার পর ভাবি তাদের একমাত্র ছেলে অমিতকে নিয়েই স্বপ্ন বুনেছিলেন। সৃষ্টিকর্তা ছেলেকেও নিয়ে গেল। বাবার অবর্তমানে অনেক কষ্ট করে তার মা তাকে চিকিৎসক বানিয়েছিলেন। সংসারে সবেমাত্র সুখের ডানা পাখা মেলেছিল। এর আগেই একটি দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, ছোটকাল থেকেই খুব মেধাবী ও শান্ত-শিষ্ট ছিল অমিত। গাজীপুর শহরের সরকারি রানী বিলাস মনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সঞ্জিত মল্লিক বাবু বলেন, অমিত আমার চোখের সামনেই বেড়ে উঠেছে। মেধাবী এই ছেলেটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। সে ওসমানী মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সেখানকার কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিল। চিকিৎসক হওয়ার পর সে গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদ পায়। করোনাকালে অমিত গাজীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে চিকিৎসকদের নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছিল। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে অসহায়-দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাও দিয়েছে সে।
ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহফুজা আক্তার বলেন, ৩৯তম বিসিএসে নিয়োগ পেয়ে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন ডা. অমিত সাহা। করোনাকালে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারী নৌ ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। তাদের নৌকাটি ভালুকা ও শ্রীপুরের খিরু নদীর মোহনায় পোঁছালে বালু ভর্তি একটি বলগেটের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে পানিতে পড়ে নিখোঁজ হন ডা. অমিত সাহা। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্থানীয়রা তার খোঁজে নদীতে তল্লাশি চালান। বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে জালে আটকে থাকা অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পানিতে ডুবে তানভীর নামে ভালুকা উপজেলার ঝালোপাজা গ্রামের আরও একজন মারা গেছেন।