
মিরর ডেস্ক : রমজানের পর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ রোজা হলো আশুরার রোজা। মহররমের ১০ তারিখ হলো আশুরা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার অনেক আগে থেকে মক্কায় অবস্থানকালীন সময়েও মহররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার রোজা রাখতেন। আশুরার রোজাসহ মহররম মাসে ছয়টি রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন দিন এ রোজা রাখবেন মুমিন মুসলমান।
বাংলাদেশে আশুরাসহ মহররমের ৬ রোজা রাখার দিন
বাংলাদেশে যারা আশুরার রোজা রাখবেন, তারা যদি আশুরার আগের দিন ৯ মহররম তথা ১৯ আগস্ট রোজা রাখতে চান; তবে তাদের অবশ্যই ৮ মহররম ১৮ আগস্ট দিবাগত রাতে সাহরি খেতে হবে। সে হিসেবে আশুরা ও আইয়ামে বিজের রোজাগুলো রাখা যেতে পারে। তাহলো এভাবে-
১. মহররমে আশুরার রোজা: আগামী ১৯ আগস্ট (বৃহস্পতিবার), ৯ মহররম, ২০ আগস্ট (শুক্রবার) ১০ মহররম এবং ২১ আগস্ট (শনিবার) ১১ মহররম রোজা রাখা। অর্থাৎ যারা আশুরার রোজা রাখতে চায়; হয় তারা আশুরার আগের দিনসহ ২ দিন ১৯-২০ আগস্ট (বৃহস্পতি-শুক্রবার) অথবা আশুরার পরের দিনসহ ২ দিন ২০-২১ আগস্ট (শুক্র-শনিবার) রোজা রাখবে। আবার আশুরার আগের ও পরের দিন মিলিয়ে ৩দিন রোজা রাখায়ও কোনো দোষ নেই।
২. মহররমের আইয়ামে বিজের রোজা: আবার হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমে আইয়ামে বিজের ৩ দিন রোজা রাখার বিষয়টিতো আছেই। সুতরাং কেউ চাইলে- ১৯-২১ আগস্ট (৯-১১ মহররম) ৩দিন রোজা রাখতে পারে। আবার ২৩-২৫ আগস্ট (১৩-১৫ মহররম) আইয়ামে বিজের রোজা রাখতে পারে। সে হিসেবে মহররমে ৬ দিন রোজা পালন করতে পারে।
মহররমে রোজা রাখার ফজিলত: মহররম মাসে আশুরা উপলক্ষে রোজা রাখার ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। আশুরায় রোজা রাখা সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার দিনের রোজার উপরে অন্য কোনো দিনের রোজাকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমজান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব দিতেও দেখিনি)।’ (বুখারি)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, আমি আশা রাখি যে, এর দ্বারা বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম)
২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মহররম মাসের ১০ তারিখে নিজে রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবাগণ বললেন- হে আল্লাহর রাসুল! এই দিনকে ইয়াহুদি-নাসারারাও মহান দিন হিসেবে পালন করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন সামনের বছর আসবে তখন ইন শা আল্লাহ আমরা ৯ মহররম রোজা পালন করব। হজরত ইবনে আব্বাস(রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, পরবর্তী বছরের মহররম মাস আসার আগেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেছিলেন।’ (মুসলিম)
এ কারণেই হজরত ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল এবং ইসহাকসহ অন্যান্যরা ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখও রোজা রাখাকে মোস্তাহাব মনে করতেন। কেননা ১০ তারিখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোজা রেখেছেন আর ৯ তারিখে রোজা রাখার ইচ্ছা করেছিলেন।
মহররমে আশুরা উপলক্ষ্যে বিশ্বনবির রোজা পালন
মহররমে আশুরা উপলক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রোজা পালনের ৪টি অবস্থা ছিল। তাহলো-
> মক্কায়
তিনি মক্কায় অবস্থানকালীন নিজে আশুরার রোজা পালন করেছেন কিন্তু কাউকে সে সময় রোজা রাখতে নির্দেশ দেননি।
> মদিনায়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ইয়াহুদিদেরকে এই দিনে রোজা রাখতে দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করে জানার পর তিনিও এই দিনে রোজা পালন করাকে পছন্দ করলেন এবং সাহাবাদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।
> দ্বিতীয় হিজরিতে
হিজরি দ্বিতীয় বছরে যখন রমজানের রোজা ফরজ হয় তখন তিনি সাহাবাদেরকে আাশুরার রোজা রাখার আর নির্দেশ দেননি। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি সাহাবাদেরকে আর নির্দেশও করেননি আবার নিষেধও করেননি।
> বিশ্বনবির ইন্তেকালের আগে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের আগে তিনি ও তার সাহাবায়ে কেরামগণ সকলে শুধু মহররমের ১০ম তারিখ রোজা রাখতেন। কিন্তু সাহাবাগণ যখন অভিযোগ জানালেন যে, এই দিনটিতে ইয়াহুদিরাও উৎসবের দিনে হিসেবে গণ্য করে থাকে এবং রোজা রাখে; তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি যদি পরবর্তী বছর বেঁচে থাকি তবে ইন শা আল্লাহ ৯ তারিখও রোজা পালন করব।’
মুমিন মুসলমানের উচিত, আশুরাসহ মহররম মাসে আইয়ামে বিজের তিনদিন রোজা পালন করা। যাতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসে আশুরাসহ আইয়ামে বিজের রোজাগুলো পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।