
অর্থনীতি রিপোর্ট : আগামী বছর আম রফতানি বাড়বে। এ জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
রবিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে ‘আম রফতানি বৃদ্ধিতে করণীয়’ মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের আম আমরা ব্যাপকভাবে বিশ্ব বাজারে নিয়ে যেতে চাই। সেজন্য রফতানি বাধা চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আমের নিশ্চয়তা দিতে তিনটি ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। উৎপাদন থেকে শিপমেন্ট পর্যন্ত আম নিরাপদ রাখতে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট দেয়ার কাজ চলছে। এর ফলে আগামী বছর আম রফতানির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে।’
এ বছর আমের ভালো ফলন হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি লকডাউন ও বাজার না থাকায় চাষিরা আম বিক্রিতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা আশানুরূপ দাম পায়নি। সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি যেতে হবে। যাতে করে চাষিরা আশানুরূপ দাম পায় ও আম চাষে আরও আগ্রহী হয়।’
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, ‘আম বাংলাদেশের একটি উচ্চমূল্যের অর্থকরী ফসল। বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, আমের উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে প্রতি বছর আমের উৎপাদন বাড়ছে। আম রফতানির সম্ভাবনাও অনেক। কিন্তু রফতানিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। অনেক দেশ বাংলাদেশের চেয়ে কম উৎপাদন করেও রফতানিতে এগিয়ে রয়েছে।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার।
এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থাপ্রধান, আমচাষি, ব্যবসায়ী, শাকসবজি ও ফল রফতানিকারক এবং প্রাণ গ্রুপ, স্কয়ার ফুড, এসিআই, আকিজ ফুড, ব্র্যাক ডেইরিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, দেশে প্রতি বছর আমের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে আম উৎপাদনে সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে আম রফতানি হলেও এর পরিমাণ উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম। ২০১৯-২০ সালে দেশে প্রায় ১৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হলেও রফতানি হয়েছে মাত্র ২শ’ ৭৯ টন। যার আর্থিক মূল্য প্রায় এক হাজার ২শত মার্কিন ডলার।
২০২০ সালে থাইল্যান্ড সর্বোচ্চ ৭শ’ ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আম রফতানি করেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ১শ’ ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও পাকিস্তান ১শ’১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আম রফতানি করেছে। সেখানে বাংলাদেশ মাত্র ৫০ হাজার ডলারের আম রফতানি করেছে।
আম রফতানির ক্ষেত্রে মূল সমস্যার বিষয়ে সভায় জানানো হয়, উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চার অভাব, রফতানিযোগ্য উন্নতজাতের অভাব, সেলফ লাইফ কম, সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে শনাক্তকরণের অভাব, আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিংয়ের অভাব, ব্র্যান্ডিং ইমেজ সৃষ্টি না হওয়া, রফতানি কার্যক্রমে দক্ষতা, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের অভাব।
এপিএ বাস্তবায়নে কৃষি মন্ত্রণালয় এবারও দ্বিতীয়
২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) চূড়ান্ত মূল্যায়নে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ৫১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে এই অর্জন করে।
এপিএ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের অর্জিত নম্বর ৯৩ দশমিক ১৩। ৯৫টি কর্মসম্পাদন সূচকের মধ্যে ৭৪টিতে শতভাগ অর্জন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
রোববার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এপিএ পুরস্কার গ্রহণ করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।