
অর্থনীতি রিপোর্ট : বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্র থেকে ৪১ হাজার ৯শ’ ৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা নিট ঋণ এসেছে সরকারের, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১শ’ ৯১ শতাংশ বা প্রায় তিনগুণ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ আসে ১৪ হাজার ৪শ’২৮ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন গ্রাহক। ব্যাংকের চেয়ে প্রায় তিনগুণ মুনাফা আসছে সঞ্চয়পত্র থেকে। এ কারণে এখানে বিনিয়োগ বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ঋণ আসছে সরকারের।
তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের সর্বশেষ মাস জুনে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে চার হাজার ৫শ’ ৭৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা নিট ঋণ আসে সরকারের। ২০২০ সালের জুন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ আসে তিন হাজার ৪শ’ ১৭ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা যায়। প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, আলোচিত অর্থবছরে নিট ঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি ঋণ আসে সঞ্চয়পত্রে।
গত অর্থবছরে মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ দিকে এ খাতের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩শ’২ কোটি টাকা করা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে সরকার যে অর্থ সংগ্রহ করে তা থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের পর যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা সরকারের নিট ঋণ। এই ঋণ বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যয় করা হয়।
গত অর্থবছরে এক লাখ ১২ হাজার ১শ’৮৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৭০ হাজার ২শ’৮৯ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্রে গ্রাহকের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৯শ’৬০ কোটি টাকা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আমানতের সুদহার এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম। গত বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় সরকার। এর আগে থেকেই ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে আনতে শুরু করে। গত জুন মাসে ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ; যা মূল্যস্ফীতি হারের চেয়েও কম। এ কারণে গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন মাসের থেকে বেশি সময়ের জন্য রক্ষিত আমানতের সুদহার কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি হারের কম হবে না বলে জানায়। যেখানে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১০ শতাংশের ওপরেই রয়েছে।
এ কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে ও এ খাত থেকে সরকারের ঋণও বাড়ছে।অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের ঋণ বাড়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার নিট ঋণ করে ১৮ হাজার কোটি টাকা। অথচ এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯শ’৮০ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ঋণ আসায় সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৭শ’৪৯ কোটি টাকা করা হয়। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।