
আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে তালেবানদের জেগে ওঠা মহা বিপদসঙ্কেত হয়ে দেখা দিয়েছে। শুধু আফগানিস্তানেই নয়, এই সঙ্কট উপমহাদেশীয় বহুমাত্রিক সমস্যা ঘনীভূত করতেও সময় নেবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশে আফগান জঙ্গীদের নব অভ্যুদয়ের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কি মাত্রায় হতে পারে অতীতের অনেক দুঃসহ ঘটনা তার সাক্ষী। আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকারকে পেছনে ঠেলে নতুন উদ্যমে জঙ্গী তালেবানরা প্রস্তুত হচ্ছে এমন দুঃসংবাদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতচকিত করে দিচ্ছে। শান্তিপ্রিয় আফগান জনগণও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে। বর্তমানে আফগানে নারী, শিশু ও কিশোররা যে মাত্রায় নিরাপত্তার বলয়ে নিশ্চিন্ত জীবন কাটাচ্ছে সেখানে তালেবানদের ঝড়ো হাওয়া সব তছনছ করে দেয়ার উপক্রম।
আধুনিক শিল্প সংস্কৃতি এবং দেশজ কৃষ্টি সভ্যতা নিয়ে বর্তমান আফগান সরকার দেশটিকে সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশের দোরগোড়ায় নেয়ার চেষ্টা করছে। অপ্রত্যাশিত তালেবান তান্ডব কোন পর্যায়ে নৃশংসতার আঁচড় বসাবে বুঝতে অসুবিধা হয় না। মুছে যায়নি অনেক কষ্টকর স্মৃতি। এর অসহনীয় প্রতিচ্ছায়ায় আশঙ্কিত বাংলাদেশও। আফগানিস্তানের তালেবানের উত্থান প্রক্রিয়ায় উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশী ঝিমিয়ে পড়া জঙ্গী ও মৌলবাদী গোষ্ঠী। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে তেমন বিপদের আভাস উঠে আসছে। আফগান যাওয়ার এক স্লোগান সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর পর্যবেক্ষণে আফগানে তালেবান উত্থানে উচ্ছ্বাস প্রকাশ ছাড়াও সে দেশে গমনের উস্কানিও আসছে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জঙ্গী আস্তানাই নয়, উগ্র আর মৌলবাদীদের গোপন অবস্থান বহুবার শনাক্ত করে উচ্ছেদ করার ঘটনা সুবিদিত। তাদের পুরোপুরি নির্মূল করা গেছে এমনটাও নয়।
আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য দেশে ফিরিয়ে নেয়া চলমান সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করতে সময় নেবে না। শুধু তাই নয়, নবউদ্যমে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গী তালেবানদের সময়মতো উৎখাত করতে ব্যর্থ হলে এই রাষ্ট্রটি মধ্যযুগীয় বর্বরতায় পুনরায় আবর্তিত হবে। তালেবান শাসনামলে পুরো দেশটিকে এক নিষ্ঠুরতার যাঁতাকলে পিষ্ট করে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা এখনও সংশ্লিষ্টদের শিহরিত করে। পবিত্র ইসলামের নামে যে ঘৃণ্য ও অপরাজনীতি আফগানে বিস্তার লাভ করে তা শুধু এই উপমহাদেশেই নয়, বিশ্বের অন্য দেশে তাদের এই নির্মম দর্শন পাচার হয়েছে। গোটা বিশ্বকে জিম্মি করে রেখেছে অবরুদ্ধতার কঠিন জালে।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, সেই আশির দশক থেকে বাংলাদেশে একটি স্লোগান খুবই পরিচিত ছিল- ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। বাংলাদেশ থেকে উদীয়মান তরুণদের উস্কানি দিয়ে আফগানে নিয়ে যাওয়া হতো। জঙ্গী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কাজে লাগানো হতো আফগান যুদ্ধে তালেবানদের পক্ষে। দেশে ফিরে এরাই বিএনপি-জামায়াতের ক্রীড়ানক হয়ে দেশে জঙ্গী তৎপরতার শুরু করে। সেই বীভৎসতার পুনরাবৃত্তি কোনভাবেই কাম্য নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কর্মতৎপরতা বাড়িয়ে দিয়ে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছে। এই অপশক্তি কোনভাবেই যাতে মাথা চাড়া দিতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। দেশকে জঙ্গী তালেবান অনুসারীদের হাতে আর বিধ্বস্ত হতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক সব ব্যবস্থাকেই আমলে নিতে হবে।