
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চফলনশীল এবং অধিক চিনি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিএসআরআই আখ-৪৮ নামের নতুন জাতের আখ উদ্ভাবন করেছে।
বুধবার (৩০ জুন) বিএসআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৫তম সভায় এ জাতটি অবমুক্ত করা হয়।
সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, এ জাতের ফলন (৯৩ দশমিক ৫০-১শ’ ২১ দশমিক ৫২ টন) বহুল প্রচলিত চেকজাত ঈশ্বরদী-৩৯ (৯০ দশমিক ৭৮-১শ’ ১৩ দশমিক ১৩) এর চেয়ে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। চিনি ধারণ ক্ষমতা ১২ দশমিক ৬-১৫ দশমিক ১১ ও গুড় আহরণ হার ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। জাতটি মোটা এবং স্মার্ট ও উইল্ট রোগ প্রতিরোধী। এতে লালপচা রোগ দেখা যায় না।
ঈশ্বরদী দাশুড়িয়া অঞ্চলের কৃষক মহিরুল আলম বলেন, এ জাতের আখের পাতায় ধার কম থাকায় শ্রমিকরা অনায়াসে ক্ষেতে কাজ করতে পারেন। ফলে এই আখ ক্ষেতে শ্রমিকের ঘাটতি হবে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় আখের পাতায় ধার বেশি থাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। এর ফলে আখের পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলনও কম হয়।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আখ চাষি আনিস মিয়া জানান, নতুন এই জাতটি উদ্ভাবনে আমরা খুব আশাবাদী। এতদিন আখ চাষ করে অনেককে লোকসান গুনতে হয়েছে। ঋণ নিয়ে আখ চাষ করে পথে বসেছে অনেকে। এখন হয়তো এই জাত আবাদ করে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারবো।
জানা যায়, ২০০৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের দুটি জাতের আখ সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ক্লোনটিকে পুনরায় নিজেদের মধ্যে সংকরায়ন করে ২০১১ সালে আই ১১১/১১ ক্লোনটি নির্বাচিত করা হয়।
এরপর প্রাথমিক ফলন পরীক্ষা, অগ্রবর্তী ফলন পরীক্ষা, আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষাসহ বেশ কিছু গবেষণার মাধ্যমে এটিকে নতুন জাত হিসেবে অবমুক্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডের জাত অবমুক্তির ওই সভায় সব সদস্যের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার জাতটির প্রশংসা করেন।
ঈশ্বরদী সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক সঞ্জিত কুমার পাল বলেন, আখের নতুন এই জাতটি উদ্ভাবনের মাধ্যমে সুগার মিলের পাশাপাশি চাষিরাও ব্যাপক লাভবান হবেন। এই জাতের আখ চাষে ব্যাপক সুবিধা আছে। একদিকে শ্রমিক কম লাগবে অন্যদিকে ফলন বেশি হবে। দেশের চিনি শিল্পের ঘাটতি মিটবে।