
ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামাল অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ-সম্পদ এসব দিকে তার কোনো নজরই ছিল না।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) ‘শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার, ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটা চক্রান্ত করে কামালকে গুলি করা হয়, হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সে যখন বেঁচে যায় তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়। অথচ রাষ্ট্রপতির ছেলে, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, জাতির পিতার ছেলে- সে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতো। কখনো বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সেজন্য অর্থ-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে তার কোনো নজর ছিল না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আবুল ফজল সাহেব একটা লেখা লিখেছিলেন সেটা যদি কেউ পড়েন তবে দেখবেন কীভাবে কামালকে তিনি তার (কামাল) যে অমায়িকতা, সাদাসিধে জীবনযাপন সেটিই তুলে ধরেছেন। আমার ছোট ভাই, আমি নিজে বলতে পারি ও এত সাদাসিধে জীবনযাপন করতো। সে একজন সাংস্কৃতিক মনা আবার রাজনীতিবিদ, কখনো বিলাস-ব্যাশন এসব দিকে তার দৃষ্টি ছিল না। এটা আমার বাবার শিক্ষা ছিল, মায়ের শিক্ষা ছিল। তাছাড়া একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ। সেখানে তো বিলাসিতা করার সুযোগ নেই। আর ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ-সম্পদ এসব দিকে তার কোনো নজরই ছিল না।
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বলেন, দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের পাশে থাকা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, ক্রীড়া অঙ্গন এসব কিছুর উন্নতি করাই ছিল তার সবচেয়ে বড় কথা। কীভাবে সংগঠনগুলোকে আরও ভালোভাবে গড়ে তোলা যায় সেসব নিয়েই ছিল তার চিন্তা। আমার আব্বা যেমন সারা জীবন এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সন্তান হিসেবে আমরাও একদিকে যেমন পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু আমরা কখনো সেই কষ্টকে কষ্ট মনে করিনি। আমার মা সেটা মনে করতে দেননি। কোনো হা-হুতাশ, কোনো চাওয়া, অতিরিক্ত কোনো কিছু চাওয়া সেগুলো আমাদের ছিল না। সাধারণভাবে জীবনযাপন করা, একটা আদর্শ নিয়ে চলা। দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা, এটাই আমাদের শিক্ষা। আর সেই শিক্ষাই কামাল অনুসরণ করেছে।
শেখ কামালের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শেখ কামাল বেঁচে থাকলে এদেশের যুব সমাজের জন্য আরও অনেক কাজ করতে পারতো। যে কোনো একটা জাতির জন্য শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি চর্চা, এগুলো অপরিহার্য একটি জাতিকে গড়ার জন্য। আমাদের শিশু-কিশোর বা যুবক সবার জন্য, তাদের যে মেধা সে মেধা বিকশিত হওয়া, তাদের মননগুলো দেশের কাজে লাগানো এটাই তো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। সাতটি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও দু’টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যককে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ দেওয়া হবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল অডিটরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- আজীবন সম্মাননায় কাজী মো. সালাউদ্দিন, ক্রীড়াবিদ হিসেবে মাহফুজা খাতুন শিলা (সাঁতার), রোমান সানা (আরচ্যারি), মাবিয়া আক্তার সীমান্ত (ভারত্তোলন), ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মনজুর কাদের (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব) এবং ক্যা শৈ ল হ্ন (কারাতে ফেডারেশন), উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হিসেবে আকবর আলী (ক্রিকেট) ও ফাহাদ রহমান (দাবা), উন্নতি খাতুন (ফুটবল), ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন/সংস্থা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওয়ালটন।